
কলকাতা: কথায় বলে না, স্যাঁকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা! ভারতের এক পদক্ষেপে বাংলাদেশের চুনোপুটি নেতাদের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ‘চিকেনস নেক’ কেটে দেওয়ার ফাঁপা হুঁশিয়ারি শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশের ছাত্র-যুব নেতাদের মুখে। সেই ‘চিকেনস নেক’ পাহারা দিতে এবার ভারত যা করল, দেখে গ্যাস বেলুনের মতো হাওয়া বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের ছাত্রনেতাদের।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, চিকেনস নেক-এর সুরক্ষা বাড়াতে শিলিগুড়ি করিডরে ব্রহ্মস মিসাইল, এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন রেখেছে ভারত। শুধু তাই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি দেশের যোগসূত্রকে অটুট রাখতে বামনি, কিষাণগঞ্জ ও এরাজ্যের চোপড়াতে তিনটি সেনা-দুর্গ গড়েছে ভারত। বাংলাদেশের ‘কেয়ারটেকার’ সরকারের প্রধান ইউনূস যেভাবে প্রায়শই পাক সেনাপ্রধান ও কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, সেদিকে তাকিয়েই ভারতের এই পদক্ষেপ, খবর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে। তবে সেনার একটা সূত্র বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, চিনা আগ্রাসনের জবাব দিতেও ভারতকে সীমান্ত সুরক্ষায় বাড়তি নজর দিতে হয়েছে।
সবমিলিয়ে শিলিগুড়ি করিডোর এখন দুর্গ। সেখানে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন। এমনভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনওরকম হামলা হলে বা প্রয়োজন পড়লে বাংলা, সিকিম ও উত্তর-পূর্ব থেকে সেনার গাড়ি, অস্ত্র-সহ সব সামরিক সরঞ্জাম সেখানে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়। সেনার একটা সূত্র বলছে, শিলিগুড়ির কাছে সুকনাতে ‘ত্রিশক্তি কোর’ বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে। আছে টি-৯০-র মতো ব্যাটল ট্যাঙ্ক। আকাশপথে নিরাপত্তার জন্য এ রাজ্যের হাসিমারা এয়ার বেস-এ রাখা আছে রাফালে ফাইটার জেট। আছে মিগ যুদ্ধবিমানও। সঙ্গে ব্রহ্মস মিসাইলের আস্ত ভাণ্ডার তৈরি। রক্ষণ ও প্রত্যাঘাত– দুই পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত ভারতীয় সেনা, জানিয়েছেন এক কর্তা।
পাশাপাশি, বাংলাদেশ বা চিনের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ভারতের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম। রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা সারফেস টু এয়ার মিসাইলও প্রস্তুত। সঙ্গে ইজরায়েল থেকে কেনা মিডিয়াম রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার মিসাইল, DRDO-র তৈরি আকাশ মিসাইল-ও শিলিগুড়ি করিডোর-এর কাছে রেখেছে ভারতীয় সেনা। চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যত স্যান্ডউইচের দশা চিকেনস নেক-এর। ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগের জন্য এই এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত দরকার। চলতি বছরের মার্চে চিন সফরে গিয়ে ইউনূস সেভেন সিস্টার্স-কে ‘ল্যান্ডলকড’ বলে বির্তক উস্কে দিয়েছিলেন। চিনের কাছে ভিক্ষার ঝুলি পেতে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশ নাকি ওই এলাকায় সমুদ্রপথের একমাত্র পাহারাদার। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে চিনের নাকি অনেক ‘লাভ’ হতে পারে। এছাড়াও তিস্তার জল নিয়েও দুই দেশের মধ্যে চোরা টেনশন রয়েছে।
হাসিনা-কে দেশছাড়া করার পর থেকেই ইউনূস ঝুঁকেছেন চিনের দিকে। ভারতকে বিপদে ফেলতেই সীমন্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে লালমণিরহাটে চিনকে বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরি করতে হাত উপুড় করেছেন ইউনূস। ২০৩০-এর মধ্যে সেখানে তৈরি হয়ে যাবে চিনা ঘাঁটি। এই সব নিরাপত্তাজনিত হুঁশিয়ারি মাথায় রেখেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩৬০ ডিগ্রি নিরাপত্তার জন্য বাড়তি ৮১৬০ কোটি টাকা খরচে দুটি বাড়তি আকাশ অ্যাডভান্সড মিসাইল সিস্টেম ও ভৈরব ব্যাটেলিয়নকে সেখানে মোতায়েন করেছে সেনা। একইসঙ্গে সেনার নবতম ড্রোন বাহিনী ‘অশনি প্লাটুন’, আত্মঘাতী কামিকাজে ড্রোন-ও মোতায়েন রয়েছে।