শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালের (North Bengal University) উপাচার্য হিসেবে ফের পুনর্নিযুক্ত হলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র (Om Prakash Mishra)। অস্থায়ীভাবে দুই মাসের জন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হয়েছে। তবে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত উপাচার্যের জন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া তিনি কোনও জমি হস্তান্তর করতে পারবেন না। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কোনও বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলা ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে অস্থায়ী উপাচার্যের জন্য বেঁধে দেওয়া এই শর্তগুলি স্বাভাবিকভাবেই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, সূত্রের খবর, হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রের জন্য জমি হস্তান্তরের বিষয়ে সবুজ সংকেত এসেছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেই। তাহলে কি বারংবার তৈরি হওয়া বিতর্কের জেরেই অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশ? এই প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ একর জমি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। উত্তরবঙ্গে পর্যটন নির্ভর উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য পর্যটন দফতর। সেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান চলবে শিলিগুড়ি স্টেট ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট নামে। সেই কারণে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ একর জমি স্টেট ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট নামে ওই সোসাইটিকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল পর্যটন দফতর। সেই মতো রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছিল ওই পাঁচ একর জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য। সূত্রের খবর, সেই মতো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সম্মত ছিল।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ জমতে শুরু করেছিল একাংশের মধ্যে। হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্র ঘিরে মামলা গড়িয়েছিল আদালতেও। জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল হাইকোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, গতবছরের শেষের দিকে বিধানসভায় শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, এই হোটেল ম্যানেজমেন্টের জন্য মোট ৬৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৪১ টাকা খরচ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উচ্চ শিক্ষা দফতর অনুমোদন করেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, গোটাটাই সরকারি প্রকল্প এবং এখানে বেসরকারি কিছু নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও কেন উপাচার্য হিসেবে ওম প্রকাশ মিশ্রকে দুই মাসের জন্য পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রে এই শর্ত বেঁধে দেওয়া হল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও এই বিষয়ে ওম প্রকাশ মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি এই বিষয়ে।