শিলিগুড়ি: হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই ইতঃস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল কুকুরটা। মুখে একটা হাতের টুকরো। দৃশ্য দেখে রীতিমতো শিউরে ওঠেন রোগীর পরিজনরা। কুকুরের মুখে কাটা হাতের টুকরো এল কোথা থেকে? যাঁর হাতের অংশ সেটি, তিনি ততক্ষণে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রীতিমতো কাতরাচ্ছেন। খোঁজ নিতে প্রকাশ্যে এল আরও বিস্ফোরক তথ্য। দুর্ঘটনায় হাত কেটেছিল রোগীর। সেই কাটা হাতের টুকরো নিয়েই হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেই হাতের টুকরোই কুকুরের মুখে ঘুরছে হাসপাতালের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। চাঞ্চল্যকর ঘটনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চলতি সপ্তাহেই কাটোয়া হাসপাতালে এক মর্মান্তিক ও চরম উদাসীনতার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সেক্ষেত্রে সদ্যোজাতর শিশু মুখে করে নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল এক কুকুরকে। এবার পথ দুর্ঘটনায় আহত যুবকের কাটা হাত মুখে করে ঘুরতে দেখা গেল কুকুরকে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রবিবার শিলিগুড়ির নরেশ মোহাসপড় এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শিলিগুড়ির দুর্গাদাস কলোনির বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার। আহত অবস্থায় সঞ্জয়কে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সঙ্গে তাঁর কাটা ডান হাত নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছয় তাঁর পরিবার।
হাসপাতালে তড়িঘড়ি শুরু হয় চিকিৎসা। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁদের প্রাথমিকভাবে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ফের ওয়ার্ডে ঢুকে যুবকের বেডের কাছে পৌঁছন। তাঁদের বক্তব্য, ওয়ার্ড থেকে কিছুক্ষণ পর কাটা হাতের অংশটি উধাও হয়ে যায়।
পরে দেখা যায় হাসপাতাল একটি কুকুর সেই হাত মুখে নিয়ে ঘুরছে। যুবক তখন অচৈতন্য অবস্থায় বেডে শুয়েছিলেন। দৃশ্য দেখতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের এক সদস্যের বক্তব্য, “কাটা হাত জোড়া লাগবে, এই আশাতেই হাতটি নিয়ে এসেছিলাম আমরা। সে চেষ্টা তো হয়নি। উলটে, সেই হাত কুকুরের মুখে পৌঁছয়।” পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
রোগীর পরিবারের দাবি, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করতেই উলটে চাপ দেওয়া হয়। আমাদেরই বলা হয়, কেন ওই হাত আমরা নিজেদের কাছে না রেখে রোগীর পাশে রেখেছিলাম।” কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতর কুকুর ঢুকে কীভাবে বেড থেকে হাতের টুকরোটি নিয়ে যেতে পারল? বিষয়টি কীভাবে হাসপাতাল কর্মীদের নজর এড়াল? এই নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্তর্তদন্ত হচ্ছে। কারোর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই কাটোয়া হাসপাতালে সদ্যোজাতর দেহ খুবলে খেতে দেখা গিয়েছিল এক কুকুরকে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে শোরগোল পড়ে যায়। কীভাবে হাসপাতাল চত্বরে প্লাস্টিকের প্যাকেটে মৃত শিশুর দেহ ফেলা হল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কীভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজর এড়াল বিষয়টি, সেই প্রশ্নই অত্যন্ত গহীন। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল চত্বরেই সেই শিশুর দেহ কুকুর খুবলে খেল, গোটা বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। হাসপাতালের রেজিস্টার বুক খতিয়ে দেখছেন হাসপাতালের তদন্তকারীরা। গত কয়েক দিনে মৃত প্রসব করা শিশুর তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে কি না, তার তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন হাসপাতাল সুপার। এছাড়াও হাসপাতাল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।