শিলিগুড়ি: মাত্র কিছুদিন কিছুদিন আগেও সিপিএম (CPIM) থেকে বিজেপি (BJP) কে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh)। হাতে চে গুয়েভারার ট্যাটু থাকা সেই শঙ্করই এখন বিজেপি নেতা। শুধু তাই নয়, গেরুয়া শিবিরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মিলেছে বিধানসভা ভোটে লড়ার টিকিট। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন শিলিগুড়ির বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, কিছুদিন আগে যে সিপিএম নেতা বিজেপিকে উঠতে বসতে আক্রমণ শানিয়েছেন, সমালোচনা করেছেন, তাঁকেই প্রার্থী করল দল! শঙ্করের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে বিক্ষোভ শুরু করলেন আদি বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
কোনভাবেই শঙ্করকে শিলিগুড়ির প্রার্থী হিসেবে মানবেন না বলে সাফ জানালেন দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি নৃপেন দাস। তাঁর কথায়, “আমরা কোনভাবেই মানতে পারছি না যে, শঙ্কর ঘোষ বিজেপির প্রার্থী! একহাতে চে গুয়েভারার ট্যাটু আঁকা আছে ওঁর। আদ্যন্ত বামপন্থী শঙ্কর। এতদিন বিজেপিকে গালমন্দ করেছে। এখন বিজেপিতে এসে ও প্রার্থী? আমরা মানব না।”
প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের মুখে শিলিগুড়ির সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের ছায়াসঙ্গী শঙ্কর নাম লেখান বিজেপিতে। সিপিএমের বিরুদ্ধে নবীনদের সুযোগ না দেওয়া, হেরে যাওয়া প্রার্থীকে বারবার টিকিট দেওয়ার মতো অভিযোগ করে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। শঙ্করের আরও কটাক্ষ, ‘বাম-কংগ্রেস-আব্বাসের জোট ক্ষমতায় আসবে, এটা সাধারণ মানুষের কাছে অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো। আর শিলিগুড়িতে গত পাঁচ বছরে শুধুই ঘাত-প্রতিঘাত আর চিঠি। মানুষ চিঠিতে বিশ্বাস করে না।’
এর মধ্যেই জল্পনা শুরু হয় যে, সদ্য সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে আসা শঙ্কর ঘোষকেই এবার অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী করতে পারে গেরুয়া শিবির। এই অবস্থায় জনসংযোগও শুরু করে দেন নব্য বিজেপি নেতা। অবশেষে দেখা যায় শঙ্করকেই একুশের ভোটে শিলিগুড়ি থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার পরেই শুক্রবার শঙ্করকে প্রার্থী করা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন আদি বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ মানতে নারাজ শঙ্কর। তাঁকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের একাংশের ক্ষোভ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির বিজেপি প্রার্থী বলেন, “দলের অন্দরে সকলেই আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সকলের কাছে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। ক্ষোভ-বিক্ষোভ কোথাও নেই।”
একদা গুরু-শিষ্য, অশোক ভট্টাচার্য ও শঙ্কর ঘোষ এবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাঁদের দ্বৈরথ ঘিরেই এখন সরগরম শিলিগুড়ি। সিপিএমে থাকাকালীন জেলা রাজনীতিতে অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার জুটির ছায়াসঙ্গী ছিলেন শঙ্কর ঘোষ। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর সেই পুরনো মেন্টরের বিরুদ্ধেই সরব তিনি। এর মধ্যে তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হল বিজেপিতেও।
আরও পড়ুন: বামের থেকে রামে গিয়েই টিকিট, শিলিগুড়িতে এবার ‘গুরু-শিষ্যে’র লড়াই
অন্যদিকে একই পরিস্থিতি ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রেও। ওই কেন্দ্রে এবার বিজেপি টিকিট দিয়েছে শিখা চ্যাটার্জীকে। যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে দলের অন্দরে। বিজেপি নেতা অলোক সেন বলেন, “কর্মীরা চাইছেন আমি প্রার্থী হই। কিন্তু দল টিকিট দেয়নি। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।”