Panchayat Election 2023: গোটা রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, পাহাড়ে কেন দ্বিস্তরীয়? জেলা পরিষদ কি উবে গেল

Panchayat Election in Hills: গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি আর জেলা পরিষদ - ত্রিস্তরীয় ভোট। তিন স্তরে তিন আলাদা আলাদা প্রার্থী। সাধারণত পঞ্চায়েত ভোট ত্রিস্তরীয়ই হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু পার্বত্য দার্জিলিং। সেখানে ত্রিস্তরীয় নয়, দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট।

Panchayat Election 2023: গোটা রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, পাহাড়ে কেন দ্বিস্তরীয়? জেলা পরিষদ কি উবে গেল
পঞ্চায়েত ভোটImage Credit source: টিভি নাইন বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 26, 2023 | 8:36 PM

দার্জিলিং: বর্ষা পা রেখেছে বঙ্গে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের উত্তাপ্তে তপ্ত বঙ্গ-রাজনীতি। ভোট প্রচারে ব্যস্ত শাসক-বিরোধী সব পক্ষ। কে কাকে প্রচারে টেক্কা দেবে, সেই নিয়ে ব্যস্ত সবাই। সেও এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি আর জেলা পরিষদ – ত্রিস্তরীয় ভোট। তিন স্তরে তিন আলাদা আলাদা প্রার্থী। সাধারণত পঞ্চায়েত ভোট ত্রিস্তরীয়ই হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু পার্বত্য দার্জিলিং। সেখানে ত্রিস্তরীয় নয়, দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট। জেলা পরিষদ বলে সেখানে কোনও কিছুর অস্তিস্তই নেই। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে এবার ভোট হচ্ছে দুটি স্তরে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে। গোটা রাজ্যে যেখানে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, সেখানে পাহাড়ে কেন দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত? পাহাড়ের পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা রাজ্যের বাকি সব জায়গা থেকে কিছুটা আলাদা। জেনে নিন, কেন জেলা পরিষদ নেই পাহাড়ে…

দুই দশক পেরিয়ে পাহাড়ে আবার পঞ্চায়েত ভোট

২০০০ সালে পাহাড়ে শেষ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। তারপর থেকে পাহাড়বাসী আর কোনও পঞ্চায়েত ভোট দেখেনি। সেখান থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে পাহাড়ে আবার পঞ্চায়েত ভোট আয়োজিত হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোট করানোর জন্য পাহাড়বাসী ও পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। শেষ পর্যন্ত সেই দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি পাহাড়ের লোকজন। তবে আগামী দিনে যাতে পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়, তার জন্য আগামী দিনে আরও সুর চড়াবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।

পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কেন নেই?

পাহাড়ের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা অনেকদিন থেকেই জটিল হয়ে রয়েছে। তবে পাহাড়ে যে জেলা পরিষদ কোনও কালেই ছিল না, বিষয়টি তেমন নয়। অতীতে রাজ্যের অন্যান্য় জায়গার মতো পাহাড়েও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ছিল। বলা হয়ে থাকে, সেই সময় জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই থাকত শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন সমতলের নেতাদের হাতে। আর এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন জিএনএলএফ নেতা সুভাষ ঘিসিং। শুরু হয়েছিল পৃথক রাজ্যের দাবিও। সেই আন্দোলন ঘিরে হিংসাও কম হয়নি পাহাড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালে একটি মধ্যপন্থা বেরিয়ে আসে। পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে সরে আসে জিএনএলএফ। আর দার্জিলিংয়ের যে জেলা পরিষদ ঘিরে এত বিপত্তি সেটিকে দুটি আলাদা ভাগ করা হয়। শিলিগুড়ি ও আশপাশে সমতল এলাকা নিয়ে গঠিত হয় শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। আর পাহাড়ের অংশটুকু নিয়ে গঠিত হয় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল বা দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ।

দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ আসলে কী?

নামে জেলা পরিষদ না থাকলেও এই দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ ছিল জেলা পরিষদের সমতুল্যই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলে থাকেন, জেলা পরিষদের থেকে বেশি ক্ষমতা ছিল দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের হাতে। কারণ, এটি ছিল আধা-স্বশাসিত প্রশাসনিক সংস্থা। এই দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন সুভাষ ঘিসিং। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ডিজিএইচসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তিন বার জিতেছিলেন। তারপর চতুর্থবার আর ভোট হয়নি দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদে। সেই সময় থেকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন ঘিসিং।

বিমল শিবিরের উত্থান ও পাহাড়ের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

এদিকে ওই সময়ের মধ্যে ক্রমেই পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দিকে পাহাড়ের মানুষজন ঝুঁকতে শুরু করে। চাপের মুখে ২০০৮ সালে প্রশাসকের দায়িত্ব ছাড়েন ঘিসিং। তারপর কোনওরকমে গোঁজা-গুঁজি দিয়ে চলতে থাকে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল। আর গুরুংদের নেতৃত্বে ফের একবার কেন্দ্রীভূত হতে থাকে পাহাড়ের জনমত। আবারও আন্দোলন ঘনীভূত হতে শুরু করে।

তৈরি হল নতুন প্রশাসনিক সংস্থা জিটিএ

২০১১ সাল। বাংলায় ইতিমধ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়ে গিয়েছে। বাংলার শাসন ক্ষমতা তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। পাহাড়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থার হাল ফেরাতে আবার শুরু হয় তোড়জোড়। আবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। কেন্দ্র-রাজ্য আর গুরুংরা। আবার নতুন চুক্তি। তারপর ২০১২ সালে তৈরি হয় নতুন প্রশাসনিক সংস্থা জিটিএ। গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আগের দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের বদলে দায়িত্ব যায় জিটিএ-র হাতে। সহজ কথায়, দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের মতো এই জিটিএ-ও হল জেলা পরিষদের সমতুল্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান।

পঞ্চায়েতের সময়ে একইসঙ্গে তৃতীয় স্তরের ভোট নয় কেন?

এটা বোঝা গেল, যে পাহাড়ের পঞ্চায়েত ভোট আপাতভাবে দ্বিস্তরীয় হলেও, সেখানে তৃতীয় স্তর বলে যে কিছুই নেই… এমন নয়। জিটিএ সেখানে তৃতীয় স্তরের কাজ করে। কিন্তু তাহলে তৃতীয় স্তরের ভোট এখন কেন হচ্ছে না? জিটিএ ভোট আগেই হয়ে গিয়েছে। বোর্ড গঠন হয়েছে। জিটিএ বিল যখন তৈরি হয়েছিল, সেই সময় তাতে পঞ্চায়েতের বাকি দুই স্তরের ভোটের বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। সেই কারণে জিটিএ স্তরের ভোট এবং বাকি দুই স্তরের ভোট একসঙ্গে হয় না পাহাড়ে।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিষ্ক্রিয় পাহাড়ের পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত

২০০০ সালে শেষ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। তারপর থেকে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের জটিলতার কারণে আর ভোট হয়নি। পরবর্তীতে জিটিএ গঠন হলেও সেখানে বাকি দুটি স্তরের বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। ফলে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরগুলি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় পাহাড়ে। আর এই নিয়েই আপত্তির সুর ক্রমেই বাড়তে থাকে পাহাড়ে। জেলা পরিষদ স্তরের সমতুল্য কাজ জিটিএ করবে। কিন্তু বাকি দুই স্তরের কাজ কীভাবে হবে? সেই নিয়েই পাহাড়ে আবার পঞ্চায়েত ভোট শুরু করার দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত এবার ফের বাকি দুই স্তরে পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে পাহাড়ে।