
চুঁচুড়া: টপিক ‘বন্দেমাতরম’। আর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সংসদে এই নিয়ে নানা আলোচনা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যেই না বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেছেন তারপর থেকে তৃণমূল বিষয়টিকে নিয়ে পথে নেমেছে। কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই স্রষ্টার এক সময়ের বাস ভবন এখন অনাদরেই। ভবনের সামনে সাহিত্য সম্রাটের আবক্ষ এখন খোলা আকাশের নীচে। শেষে পুলিশ কর্মী তাতে দিলেন আচ্ছাদন।
১৮৭৬ সালে নৈহাটির কাঁঠালপাড়া থেকে চুঁচুড়ায় এসেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। হুগলির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন। জোরাঘাটের বাড়িতে থাকতেন। সেখানেই চলত সাহিত্য চর্চা। স্থানীয় ইতিহাস ও সাহিত্য থেকে জানা যায়, জোরাঘাটের এই বাড়িতেই আনন্দ মঠের মন্ত্র ‘বন্দেমাতরম’ লেখা হয়েছিল। আবার কারও কারও মতে বন্দেমাতরমের সুর দেওয়া হয়েছিল এই ভবনে। তবে এই দাবি নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। বঙ্কিমের এই বাড়িটি ‘বন্দেমাতরম ভবন’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। যে ভবনে থাকার সময় প্রকাশিত হয় ‘রজনী’, ‘উপকথা’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘আনন্দমঠের’ মত সাহিত্য।
১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বন্দেমাতরম ভবনটি অধিগ্রহণ করে। সংস্কারের অভাবে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার মত অবস্থা হয়। ১৯৯৮ সালে ভবনটি সংস্কার হয়। পরবর্তী সময়ে আবারও ভবনটির সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সাহিত্য সম্রাটের সৃষ্টি নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরির দাবি অনেক দিনের। সেসব কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। বঙ্কিম আবক্ষ ছিল খোলা আকাশের নীচে এবং অনাদরে। স্থানীয় পুরসভা বা প্রশাসন কেউ উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
চন্দননগর পুলিশের কর্মী সুকুমার উপাধ্যায় আবক্ষে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে দেন। মালা পরানোর জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থাও করেন। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সৃষ্ট বন্দেমাতরম নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলা চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার লোক দেখানো আলোচনা করছে বন্দেমাতরম নিয়ে। বিজেপি বাংলা বিরোধী বাঙালি বিরোধী। যে ভবনে বঙ্কিমচন্দ্র থাকতেন সেটা ভগ্ন প্রায় অবস্থা। যা নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কোনও মাথা ব্যথা নেই।” বিজেপি হুগলী সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা তপন শিকদারকে নিয়ে বন্দেমাতরম ভবন বাঁচানোর জন্য আন্দোলন অনশন করেছিলাম। আজকে আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান দেবানন্দপুরের একই দশা। আর যে স্বাধীনতার বীজ মন্ত্র বন্দেমাতরম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিপ্লবীরা সেই বন্দে মাতরম ভবনের আজও পর্যন্ত কোনও উন্নতি হয়নি।”