ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে ‘স্বাগত’, তবু বিপদের সিঁদুরে মেঘ দেখছে পদ্ম
Post Poll Violence:বিজেপি (BJP) নেতৃত্বের অভিযোগ, তারকেশ্বর-সহ আরামবাগের একাধিক এলাকায় ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হাজার হাজার দলীয় কর্মীরা। বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট কিছুই বাদ যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গ: রাজ্য়ে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দুই দলকেই আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত। হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও বিপদের সিঁদুরে মেঘ দেখছনে আরামবাগের বিজেপি (BJP) সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব।
বিজেপি (BJP) নেতৃত্বের অভিযোগ, তারকেশ্বর-সহ আরামবাগের একাধিক এলাকায় ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হাজার হাজার দলীয় কর্মীরা। বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট কিছুই বাদ যায়নি। অভিযোগ, এখনও ঘর ছাড়া বহু পরিবার। আশঙ্কা, উচ্চ আদালতের এই রায়ের জেরে ফের শাসক শিবিরের অত্যাচার বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, সিবিআই তদন্তের জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের কেবল ভয় দেখিয়ে চুপ করে রাখা হবে এমন নয়, বরাদ্দ অর্থও চলে যাবে শাসক শিবিরের নেতাদের পকেটে এমনই অনুমান পদ্ম শিবিরের।
বিজেপির (BJP) আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি গণেশ চক্রবর্তী বলেন, “নির্বাচনের পর থেকে আমি নিজেও হিংসার শিকার হয়েছি। আমার চোখের সামনে একাধিক বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লুঠ, হামলা, মারধর সবই চলেছে সমানতালে। আদালত আজ যা নির্দেশ দিয়েছে তাকে স্বাগত। কিন্তু, ভয় হচ্ছে তৃণমূল এরপর ফের হামলা চালাবে। রাজ্য় ৩৫৬ধারা চালু হলে বোধহয় ভাল। আমরা নিশ্চিন্ত হই।”
শুধু গণেশ নন, কলকাতাহাইকোর্টের এই রায়কে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, “রাজ্যে তৃণমূল যেভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, যেভাবে একের পর এক আমাদের কর্মীরা খুন হয়েছেন তারপরেও যেভাবে মুখ্য়মন্ত্রী বলে গিয়েছেন রাজ্যে কোনও সন্ত্রাস হয়নি, সেখানে হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত। নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব হবে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, আদালতের এই রায়ে রাজ্যের মানুষ সুবিচার পাবেন। রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।
মেদিনীপুরে বিজেপির জেলা সভাপতি সৌমেন তিওয়ারি জানিয়েছেন, এতদিন যে মহিলারা ভয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারেননি, তাঁরা নির্দ্বিধায় আইনের শরণাপন্ন হতে পারবেন। শতাধিক মহিলার সম্মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সৌমেন। তাঁরাও সুবিচার পাবেন বলেই আশা বিজেপি নেতার।
উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্ত করে যে রিপোর্ট মানবাধিকার কমিশন জমা দিয়েছিল তাতে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিন্যাল’ বলে উল্লেখ করেছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিক-সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে। মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তাঁর কথায়, “মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাঁরা কমিশনে রয়েছেন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে আসা উচিত।” পাশাপাশি এও বলেন, “আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তদন্ত হোক। সত্যি মিথ্য সামনে আসবে।” বারাসাতের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত করার হলে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সিবিআই ছাড়া কি আর কোনও এজেন্সি নেই যারা তদন্ত করতে পারে! জ্যোতিপ্রিয়বাবু, পার্থবাবুরা সৃজনশীল মানুষ। তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা কোনওভাবেই কাম্য নয়।”
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার আদালত ভোট পরবর্তী হিংসার রায় ঘোষণার পরই রাজ্য সরকারের স্ট্যাডিং কাউন্সিল টিমের একটি বৈঠক হয়। সে বৈঠকেই ঠিক হয়েছে, আজ রাতে বা আগামিকাল সকালে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করা হতে পারে বলে খবর সূত্রের। আরও পড়ুন: ‘দিদির উপর ভরসা করলে তালিবানের গুলি খেতে হবে তাই…’, ‘বিকল্প’-সন্ধানী দিলীপ