
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ভারতের স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। এই কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এই বাংলার একটা ছোট্ট জেলা হুগলি। সেখানকার একটা ছোট্ট শহর চন্দননগর। অনেকেই জানেন না এই ছোট্ট শহরটিতে স্বাধীনতা এসেছিল ভারত স্বাধীন হওয়ারও ৩ বছর পরে। ১৯৫০ সালের ২ মে। ততদিন অবধি এই জায়গা ছিল ফরাসিদের উপনিবেশ।
চন্দননগর কেবল একটা শহর নয়। এই শহরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ঐতিহ্য আর ইতিহাস। গলি দিয়ে হেঁটে গেলে যেন মনে হয় এক ঝটকায় ফিরে গিয়েছেন স্বাধীনতার আগে। সম্প্রতি ছিল এই শহরের স্বাধীনতা পূর্তির ৭৫ বছর। রাজনীতি থেকে বিপ্লব, শিল্প থেকে সংস্কৃতি বহু ছোট বড় ঘটনার সাক্ষী আজকের চন্দননগরের স্বাধীন হওয়ার জন্মদিন তাই বেশ ধুমধাম করেই উদযাপিত হয়।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ঘটনাচক্রে তিনি এই শহরের বহু পুরনো বাসিন্দাও। এই দিন বলেন, “স্বাধীন দেশের অন্দরে একটি ছোট্ট এলাকার স্বাধীনতার মুহূর্ত এসেছিল ৭৫ বছর আগে। যতদিন সভ্যতা থাকবে সেই ইতিহাস চন্দননগরকে পৃথক মর্যাদা দেবে।”
স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য লগ্নে, প্রাচীন এই শহরকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার দাবি জানাল চন্দননগর কলেজ এবং প্রাক্তনীদের সংগঠন। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনে গিয়ে আবেদন জনিয়েছে তাঁরা।
কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিষ সরকার বলেন, “বহু ইতিহাসের সাক্ষী এ শহর। তাই সব দিক বিবেচনা করে চন্দননগরকে হেরিটেজ শহরের স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।” কলেজের প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক দীপ্তনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই, আগামী প্রজন্মের কাছে চন্দননগর নিজের ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকুক।”
প্রসঙ্গত, ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ফরাসীদের অধীনে থাকলেও ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সমান দায়িত্ব পালন করেছে এই শহরও। স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হয়ে যাওয়ায় ১৯০৮-১৯৩১ পর্যন্ত বন্ধ ছিল চন্দননগর কলেজ। টানা ২৩ বছর বন্ধ থাকার পরে ফের খোলে কলেজ। সম্প্রতি কলেজের মূল ভবনে একটি সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছে, যেখানে সুচারু ভাবে ধরা আছে শহররে ইতিহাস।
এই দিন চন্দননগর কলেজে সকালে দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। একটি শোভাযাত্রাও করা হয়। বিকেলে শহরের ৭৫ বছরের বেশি বয়সী বাসিন্দাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু বিশিষ্টজনেরাও।