হুগলি: মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে চিত্কার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেতেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু নিতান্ত পারিবারিক বিষয় ভেবে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। তাই সোমবার সন্ধ্যায় যখন চিত্কার শুনতে পেয়েছিলেন, প্রথমটায় বিশেষ আমল দেননি কেউই। কিন্তু চিত্কার পরে বদলে যায় আর্তনাদে। খটকা লাগে প্রতিবেশীদের। কিছুটা আগ বাড়িয়েই তাঁরা প্রমথেশের বাড়িতে ঢুকে যান। ঘরের পা রাখতেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। ঘরের মধ্যে মা-বাবা-মেয়ে. তিন জনের শরীর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হাত মাংস কার্যত খুবলে বেরিয়ে এসেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে হাতের শিরা কেটে। দূরেই রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন ছেলে প্রমথেশ। হুগলির (Hooghly) ধনিয়াখালির দশ নম্বর ঘড়ারায় ভয়ঙ্কর ঘটনা।
চল্লিশ বছর ধরে অসীম ঘোষাল, তাঁর স্ত্রী-ছেলে মেয়ে নিয়ে দশ ঘড়ারায় পাড়া এলাকার রাজ বাড়িতে থাকতেন। ওই বাড়ি থেকে কয়েক বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ভাইফোঁটা উপলক্ষে পল্লবী বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন প্রমথেশ দীর্ঘদিন ধরেই জটিল রোগে আক্রান্ত। ফলে তা নিয়ে পরিবারে কিছু সমস্যা ছিল।
ছোটখাটো কাজ করতেন বাবা অসীম। পরিবারে অভাব ছিল। একেবারে সংসার খরচ তার উপর ছেলের চিকিত্সার অনেক খরচ। অভাবের সংসারে অশান্তি তাই লেগেই থাকত। সোমবার রাতেও বাড়িতে অশান্তি হয় বলে জানান প্রতিবেশীরা। এক প্রতিবেশীর কথায়, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। এমনটা তো মাঝেমধ্যেই হয়। কিন্তু তারপর দেখি আর্তদান ভেসে আসছে ঘর থেকে। ঘর ঢুকতেই গোঙানির শব্দ পাই। তারপরই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। রক্তাক্ত অবস্থায় তিন জন পড়েছিল মাটিতে। আর ছেলে তখন কাতরাচ্ছে।”
প্রতিবেশীরাই খবর দেন থানায়। পুলিশ গিয়ে তিন জনকে যতক্ষণে উদ্ধার করে, ততক্ষণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তিন জনেরই হাতের শিরা কাটা ছিল। ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়েই শিরা কাটা হয়েছিল বলে অনুমান। প্রমথেশের হাতের ক্ষতও একই রকম ছিল। পুলিশ তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ধনিয়াখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, বাবা-মা ও বোনকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রমথেশ। কিন্তু কেন তিনি এমন করলেন, তার কোনও ‘ক্লু’ পাননি তদন্তকারীরা। প্রমথেশ যাতে দ্রুত সুস্থ হয়, সেদিক আগে খেয়াল রাখছেন তদন্তকারীরা। পরে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অবসাদ থেকেই এই আক্রোশ। তিন জনের দেহ ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাতে গভীর কাটা দাগ ছিল। খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে। তদন্ত শুরু করেছে ধনিয়াখালি থানার পুলিশ।