হুগলি: হগলির জনাইয়ে বাঁকসার মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja)। ঐতিহ্যের আরেক নাম এখানকার মিত্রবাড়ির পুজো। প্রায় সাড়ে চারশো বছর পার হয়ে গিয়েছে এ বাড়ির দুর্গাপুজোর।
মিত্র পরিবারের সদস্য রঞ্জন মিত্র জানান, “আমাদের পুজো এবার ৪৬৩ বছরে পড়ল। আমরা শুনেছি সে সময় এখানে ঠাকুর দালান ছিল না। হোগলা পাতা দিয়ে ছাউনি করে মায়ের পুজো হতো প্রথম দিকে। পরে কর্তারা আসতে আসতে ভাবলেন, এখানে একটা মন্দির করা দরকার। সেই প্রথম মন্দির হল ১১০০ সনে। আমাদের কুলদেবতা রঘুনাথ জীউ। তিনি অধিষ্ঠিত এখানে। তার পর তৈরি হল সদর ঘর। বাজনা বাজাতে আসতেন যাঁরা, তাঁরা এই সদর ঘরে থাকতেন। ধীরে ধীরে পুজোর রং বদলাতে শুরু করল।”
রঞ্জন মিত্রই জানান, এ পুজোর শুরু হয়েছিল মিত্র পরিবারের সদস্য ভ্রুকুটিরাম মিত্রের হাত ধরে। এ পুজোর বিশেষত্ব মায়ের পরণে থাকে নতুন বেনারসি কাপড়। শুধু মা দুর্গাই নয়, বেনারসির পোশাকে পুজোর চারটে দিন সেজে ওঠে তার সন্তানেরাও। ষষ্ঠীর দিন মিত্র বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এসে মাকে বসান। তাঁরাই মাকে অলঙ্কারে সাজান। এর পর ধুমধাম করে পুজো। দশমীর দিন ঠাকুর দালানে বরণের পর মাকে মন্দিরের বাইরে চাতালে নিয়ে বসানো হয়।
মিত্র পরিবারের অপর এক সদস্য জানালেন, “কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমীতে আমাদের অধিবাস হয়। কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে একবার কলাবউ আসে। আবার শুক্লপক্ষের প্রতিপদে অধিবাস হয়। দ্বিতীয়াতে আবার কলাবউ আসে। আবার ষষ্ঠীর দিনও অধিবাস হয়। সপ্তমীর দিন আবার কলাবউ আসে। আমাদের তিনবার অধিবাস হয়, তিনবার কলাবউ আসে। পুজো মানেই বাইরে যারা বাড়ির লোকজন সকলে আসে। সবাই মিলে এই পুজোয় মজা করি। ১০০ কিলো চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় মাকে। আমাদের দেবোত্তরের একশোটা নারকেল গাছ আছে। সেই গাছের নারকেল দিয়েই নাড়ু তৈরি হয়। ফল, নাড়ু, চাল দিয়ে নৈবেদ্য সাজানো হয়। তার পর অন্যান্য জিনিসও থাকে।”
বাঁকসার মিত্র বাড়ির যে মন্দিরটি রয়েছে, তার সঙ্গে একটা বড় মিল রয়েছে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের। এ বাড়ির সদস্য রঞ্জন মিত্র বলেন, রানি রাসমণি এই মন্দির দেখেই মা ভবতারিণীর মন্দিরের আদল ভেবেছিলেন। রঞ্জন মিত্রের কথায়, “এটা জনশ্রুতি নয়। বহু বইতেও আপনারা দেখতে পাবেন, মিত্র বাড়ির মন্দির রানি রাসমণিকে কতটা প্রভাবিত করেছিল। তিনি এই মন্দির দেখে গিয়ে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির গড়েছিলেন।”
শুধু কুলদেবতার মন্দিরই নয়, এই মিত্রবাড়ির ১২টি শিব মন্দিরও রয়েছে। এই মন্দিরগুলিও ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এই বাড়ির একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সরস্বতী নদী। পরিবারের এক সদস্যর কথায়, “এই সরস্বতী নদী এক সময় বিরাট চওড়া ছিল। গঙ্গার মূল শাখা ছিল এই নদী। সে সময় গঙ্গাপথে অনেকেই যেতে ভয় পেতেন। ডাকাতির ভয় থাকত। তাই লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে এই সরস্বতী নদী ধরে অনেকেই যেতেন। চাঁদ সদাগরও এই পথ দিয়েই ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। এখন দেখে মনে হবে এটা একটা খাল।’
মিত্র পরিবারের সদস্যরা জানান, রানি রাসমণি যখন বেনারস যান এই নদীপথেই যান। এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামও নিয়েছিলেন। সে সময় এখানকার কুলদেবতার মন্দির ও বারো শিবমন্দির দেখেন। রানিমার সঙ্গে তাঁর জামাই মথুরবাবুও ছিলেন। তাঁকেই রানিমা এই মন্দিরগুলির স্কেচ করতে বলেন। এরপই দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির ও বারোটি শিবমন্দির তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: দমদম পার্কের পুজো নিয়ে নতুন করে জটিলতা, লেকটাউন থানায় জমা পড়ল মাস পিটিশন