Divorce Case: কোনও বছরে ৩০০, কোনও বছরে চারশোর বেশি! বাংলার ‘ছোট্ট’ এই এলাকায় আচমকা কেন বাড়ছে ডিভোর্স?

Divorce Case: ভারতে বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক ফৌজদারি অপরাধ নয়। শীর্ষ আদালত ২০১৮ সালে রায় দেয় বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে বিবাহ-বিচ্ছেদ হতে পারে। কিন্তু পরকীয়ার কারণে ‘অন্য’ পুরুষটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা বা তাকে অপরাধী হিসাবে দেগে দেওয়া যাবে না।

Divorce Case: কোনও বছরে ৩০০, কোনও বছরে চারশোর বেশি! বাংলার ‘ছোট্ট’ এই এলাকায় আচমকা কেন বাড়ছে ডিভোর্স?
প্রতীকী ছবি Image Credit source: Getty Images

| Edited By: জয়দীপ দাস

Feb 21, 2025 | 1:45 PM

আরামবাগ: আরামবাগ মহকুমা এলাকা থেকে গত একমাসে নিখোঁজ ১০০ নাবালিকা। গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ নাভিশ্বাস উঠেছে পুলিশের। কিছুদিন আগে এই খবরে কার্যত তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল প্রশাসনিক মহলে। ভ্যালেন্টাইন ডে-তে রাস্তায় যুগলের দেখা না মেলাতে হতাশ মুখেই ঝাঁপ বন্ধ করেছিলেন ফুলের দোকানদারেরা। এবার উঠে আসছে আরও এক অভিনব তথ্য। হুগলির আরামবাগ মহকুমা আদালতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডিভোর্স মামলার সংখ্যা। দম্পতিরা আদালতে এসে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকছেন। বেশিরভাগ অভিযোগই পরকীয়া সংক্রান্ত। অন্যদিকে সদ্য গোঁফ ওঠা তরুণ ও কলেজ পড়া তরণীরা গোপনে স্পেশ্যাল ম্যারেজ আইনে বিয়ে সেরে ফেলছেন। সেই বিয়েও দ্রুত ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সম্পর্ক বদলের এই চিত্র ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। 

ভারতে বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক ফৌজদারি অপরাধ নয়। শীর্ষ আদালত ২০১৮ সালে রায় দেয় বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে বিবাহ-বিচ্ছেদ হতে পারে। কিন্তু পরকীয়ার কারণে ‘অন্য’ পুরুষটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা বা তাকে অপরাধী হিসাবে দেগে দেওয়া যাবে না। কিন্তু ‘সুস্থ’ বৈবাবিক সম্পর্ক এর প্রভাব কতটা তা নিয়ে আইন মহলে জল্পনা জারি আছে। ডিভোর্সের বাড়বাড়ন্তে উঠছে প্রশ্ন।

সূত্রের খবর, আরামবাগ মহকুমা আদালতে ২০২০ সাল পর্যন্ত বছরে দু’শোর মতো ডিভোর্স মামলা হতো। এখন সেই সংখ্যাটা বছরে তিনশোর অধিক। প্রতি মাসে গড় মামলার সংখ্যা আগের থেকে বাড়ছে। বিবাহের ক্ষেত্রে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । পরিসংখ্যানে গত ৫ বছরে ডিভোর্স মামলার উর্ধ্বমুখী গ্ৰাফ দেখে তাজ্জব আইনজ্ঞরাই। সোশ্যাল ও স্পেশ্যাল ম্যারেজ আইনে ডিভোর্স মামলা এলেই কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে অল্পবয়সীদের স্পেশ্যাল ম্যারেজ আইনে বিয়ে করা ও দ্রুত বিয়ে ভাঙার চাঞ্চলকর তথ্য। বিয়ে করার কিছুদিনের মধ্যেই যুগলরা কোর্টে এসে ডিভোর্স ফাইল করছেন। 

কী বলছেন আইনজ্ঞরা? 

আইনজ্ঞদের একাংশের মত, একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া ও থাকার ছাড়পত্র হিসাবে ম্যারেজ সার্টিফিকেটকে কাজে লাগানো হচ্ছে । মহকুমা আদালতের এক সরকারি কৌঁসুলি বলেন, “পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৫ বছর ধরে দু’টো বিষয় আমাদের নজরে আসছে। প্রথমটি ডিভোর্স মামলা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ডিভোর্স মামলায় এতদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রাধান্য থাকতো। এখন পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ জুড়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। ১৮ থেকে ২৫ বয়সী ছেলেমেয়েদের স্পেশাল ম্যারেজ আইনে বিবাহ সঙ্গে খুব দ্রুত ডিভোর্স হচ্ছে। আরামবাগ মহাকুমা আদালতে একশোটি ডিভোর্স মামলার মধ্যে ২০ শতাংশ মামলা এই জাতীয়।” 

তাঁর দাবি, অল্পবয়সীদের এই বিয়ে ও দ্রুত ডিভোর্সের পুরো ঘটনায় বড়দের অজান্তে ঘটছে। আবার অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে ছেলে অথবা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর পরিবারের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ছেলের বাড়ি থেকে ছেলেকে অথবা মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়েকে ডিভোর্স ফাইল করানো হচ্ছে জোরপূর্বক। ক্রমশই বেড়ে চলেছে ডিভোর্সের মামলা। 

আদলতের পরিসংখ্য়ান বলছে.. 

২০২১ সালে ডিভোর্সের মামলা ৩০৬টি

২০২২ সালে ডিভোর্সের মামলা ৩৯৭টি

২০২৩ সালে ডিভোর্সের মামলা ৩৭১ টি

২০২৪ সালে ডিভোর্সের মামলা ৪১৬টি

২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মামলার সংখ্যা ৭৪টি 

অন্যদিকে আরামবাগ থানাতে ২০২৪ সালে আরামবাগ থানাতে ৪৭টি বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। সব ক’টি সম্পর্কই বিচ্ছেদের পথে বলে খবর। পাশাপাশি ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত ৬টি বিচ্ছেদের মামলা দায়ের হয়েছে। সব ক’টিই বিচ্ছেদের পথে।