হুগলি: শর্তসাপেক্ষে বিজেপিকে সিঙ্গুরে ধরনার অনুমতি দিয়েছে হুগলি জেলা পুলিশ। শর্ত হল, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে ধরনা-অবস্থান চলবে না। একইসঙ্গে বলা হয়েছে মঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না। পুলিশি অনুমতি আসতেই জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে ধরনা মঞ্চ বাধার কাজে। কিন্তু, এই ধরনা মঞ্চে থাকতে পারবেন না জেলারই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee)।
কৃষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সামনে রেখে তিনদিন ব্যাপী ধরনায় বসছে বিজেপি। তাও আবার জমি আন্দোলনের প্রাণভূমি সিঙ্গুরে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধরনা চলবে।
দিল্লিতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলছে। সেই অধিবেশনেই আপাতত ব্যস্ত চুঁচুড়ার বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। অধিবেশনের জন্যই আপাতত সিঙ্গুরের ধরনা মঞ্চে থাকতে পারবেন না বলেই জানিয়েছেন লকেট। তাঁর কথায়, “এখন তো হাউজ় চলছে। কী করে যাব! পরে এই কর্মসূচি করলে ভাল হত। তখন যেতে পারতাম।”
এদিকে, লকেটের অনুপস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, “লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দিল্লি থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তরাখণ্ডের। তিনি একমাস ধরে সেখানেই আছেন। যেহেতু ওখানে ভোট আছে। সংসদে আমার সঙ্গে দেখাও হয়েছে মাঝে। আবার চলে গিয়েছেন। দল দায়িত্ব দিয়েছেন ওখানেই আছেন। সিঙ্গুরে রাজ্য সভাপতি যাবেন, বিরোধী দলনেতা যাবেন। আমরা যাচ্ছি সবাই। তাই লকেটের খুব দরকার আছে এরকম নয়। তিনি থাকলে নিশ্চয়ই আসতেন।”
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিকে কার্যত সমর্থন করেন দিলীপ। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের প্রশ্ন তুলে তাঁর দাবি, বাংলা ভাগ হলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও, বর্ষীয়ান নেতার এই মন্তব্যকে সমর্থন করতে পারেননি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “কী বলেছেন আমি শুনিনি, আমি জানিনা, তবে আমাদের কাছে আবেগের বাংলা। বাঙালি হিসেবে বাংলা আমাদের কাছে গর্ব, বাংলা বাংলাতেই থাকবে। রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে, আবেগে রেখে বাংলা কখনো দ্বিধাবিভক্ত হতে পারে না।” এরপর সিঙ্গুরে বিজেপির ধরনা মঞ্চে লকেটের অনুপস্থিতি নিয়ে দিলীপের মন্তব্য বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চার ব্যানারে সিঙ্গুরে এই ধরনার ডাক দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই ধরনা মঞ্চে যাওয়ার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য নেতা রাহুল সিনহাদের। থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও।
তবে এই কর্মসূচি ঘিরে রবিবার থেকেই জটিলতা শুরু হয়। সেদিন বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা ধরনামঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই সেখানে পৌঁছন সায়ন্তন বসু। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে দাঁড়িয়েই সায়ন্তন হুঁশিয়ারি দেন, সিঙ্গুরে পুলিশ রুখলে কুরুক্ষেত্র হবে। সোমবারও একটি প্রস্তুতি সভায় সায়ন্তন বলেন, পুলিশ এখানে ধরনায় বসতে না দিলে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে গিয়ে বিজেপির কিষাণ মোর্চার সদস্যরা অবস্থান করবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজেপির এই কর্মসূচি ঘিরে তৎপরতা রয়েছে হুগলি পুলিশের। সিঙ্গুর থানার পুলিশ, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার যাঁরা আধিকারিক রয়েছেন তাঁরা এখানে তৎপর রয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর তাঁরা। পুলিশের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর রোড এর পাশে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে, যাতে দুর্গাপুর রোড দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। যদিও সকাল ১০টা অবধি সে অর্থে বিজেপি কর্মীদের ভিড় ধরনাস্থলে দেখা যায়নি। যদিও বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব জানিয়েছে, সকাল ১১টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করতে পারবে।
যে ইস্যুগুলিকে মূলত হাতিয়ার করে বিজেপি ধরনায় বসছে সেগুলি কৃষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কালোবাজারির অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা। এদিনের ধরনা মঞ্চ থেকে বিজেপি সেই অভিযোগ নিয়ে সরব হবে। দ্বিতীয়, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ কিংবা বিমা দেওয়া। সেচের জন্য বিদ্যুতের যে খরচ হয়, তা নিয়েও তিনদিনের কর্মসূচিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে বার্তা দেবে বিজেপি।