হুগলি: বাংলায় কোনও মহিলাকে অপমান করা হলে তা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, সায়নী ঘোষকে ‘হেনস্থা’র প্রসঙ্গ তুলে সোমবার হুগলির পুরশুড়ার জনসভা থেকে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে রাখলেন, আগামী বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মহিলা-ব্রিগেডই হবে তাঁর শক্তি, ‘ওরা সামনে থেকে লড়বে। ভাইরা পিছনে থাকবে।’
সিঙ্গুর আন্দোলনের জেলায় লোকসভা ভোটের পর থেকেই আড়ে বহরে বেড়েছে বিজেপি। ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি আবার গড়েছেন ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’। ফলে ভোটের অংশীদার ক্রমেই বাড়ছে এ বাংলায়। যা চাপ বাড়াচ্ছে শাসকদলে। এর মধ্যে আবার তৃণমূল নেতারা কে যে কখন ‘বেসুরো’ হয়ে উঠছেন, তাও আগাম বোঝা দুষ্কর। এই যেমন এদিন মমতার সভায় দেখা গেল না উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালকে। বলেছেন, মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর যা বলার বলবেন। তিনি কী বোমা ফাটান তা নিয়ে মুখিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: ‘ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন তা সুনিশ্চিত করুন’, মমতাকে টুইট ধনখড়ের
এদিন অবশ্য মমতা বলেই দিয়েছেন, “বুথ কর্মীরাই সারা বছর ঝড়ে জলে কাজ করে। এদিনের মিটিং তাদের জন্যই।” তবে কর্মী ছাড়া যেমন দল চলে না, তেমনই সুসংহত নেতৃত্ব ছাড়াও কর্মীদের সংগঠিত করে পরিচালনা করা বেশ কঠিন কাজ। জেলায় জেলায় যেভাবে তৃণমূলের অন্দরে ‘সুর বদল’ হচ্ছে, রাজনৈতিক মহলের কাছে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও মমতা বলছেন, তাঁর ‘উন্নয়নই’ তাঁকে এগিয়ে রাখবে। “দুয়ারে সরকার ও ওল্ডেজ হোমে ১৫ লক্ষ মহিলাকে আমি বিধবা ভাতা করে দিয়েছি। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডটা স্মার্ট কার্ড। তাই খানিক সময় লাগছে। আমরা টেম্পোরারি কার্ডও দেব। যাতে আপনারা পরিষেবা পান। কেউ কার্ডের পরিষেবা না পেলে অভিযোগ জানাবেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। আমি লড়ে যাব, জেলে যাব। কিন্তু বিজেপির ঘরে যাব না।”
গত কয়েকদিন ধরে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বা দেবলীনা দত্তকে নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে এদিন তা নিয়েও সরব হন মমতা। বলেন, “বাংলাকে অসম্মান করো না। দেবলীনা, সায়নীকে ছুঁয়ে দেখা। এতবড় সাহস! করে দেখা। কী অবস্থা করি। আমি আপনাদের পাহারাদার। আমি একজন কর্মী। আমি বুথ কর্মী হয়ে থাকতে চাই। আপনি দুঃসময়ে আমায় পাবেন। কাজ করাটাই আমার একমাত্র কাজ।”
আরও পড়ুন: দলীয় কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ‘মার’, নিমতা থানা ঘেরাও বিজেপির
মমতার কথায়, “আমরা ১০ বছর ক্ষমতায় নেই। আমরা কোভিডের জন্য কোনও কাজ করতে পারিনি। কোভিডে মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে অন্য কাজ কম হয়েছে। আমি হাতে পেয়েছি আট বছর। আগে বন্যা হত। খানাকুলের মানুষ ভেসে চলে গিয়েছে। কেউ খবর রাখেনি। আমরা আড়াই লক্ষ পুকুর কেটেছি, যাতে সব জল ওখানে যায়।” একইসঙ্গে এই মঞ্চেই যুবশ্রী, কন্যাশ্রী-সহ রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের ‘ সাফল্য খতিয়ান’ও তুলে ধরেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা ফ্রিতে রেশন দিচ্ছি, দেব। আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব।” এরপরই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘ট্রেন্ডিং’ স্লোগানের সুর ধরে মমতা বলেন, “আমি বলি হরে কৃষ্ণ হরে হরে তৃণমূল ঘরে ঘরে। দু’ একজন পালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেক টাকা করেছে তারা। সেই ভোগীরা বিজেপিতে যাচ্ছে। কাকে কাকে নিতে হয় আমরা জানি। যাঁরা লাইন দিয়ে আছেন, তাঁরা চলে যান। ট্রেন ধরুন।”