
হুগলি: জ্বালাতে হয় প্রদীপ বা মোমবাতির আলো। কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে মায়ের পুজো করলেই গ্রামে নেমে আসে বিপদ! এমনটাই বিশ্বাস করেন গ্রামের মানুষ। অনেকেই বলেন, বলির সময় নাকি রুদ্র মূর্তি ধারণ করেন দক্ষিণা কালী, তাই সেই সময় মা কালিকে বেঁধে রাখা হয় লোহার শিকল দিয়ে। হুগলির ধনেখালিতে কেশবপুরের দক্ষিণা কালীর কথা কে না জানে! ৪০০ বছরের পুরনো প্রথা মেনে সেখানে আজও পূজিত হয়ে আসছেন দেবী। এতগুলো বছর পেরলেও নিয়মে নড়চড় হয় না কখনও। অমাবস্যার আগে এবারও শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্ততি।
কথিত আছে, প্রায় 8০০ বছর আগে বর্ধমানের মহারাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে ধনেখালির কেশবপুরে আটচালার মন্দির তৈরি করেন। এরপরই শুরু হয় দক্ষিণা কালীর পুজো। মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজার প্রচলন চলে আসছে সেই সময় থেকেই। সেই সময় থেকে ষোড়শ উপাচারে পূজিত হয়ে আসছেন দক্ষিণাকালী। শুধুমাত্র কেশবপুরের নয়, আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করেন, এই মা কালী এতটাই জাগ্রত যে ভক্তিভরে পুজো দিলে মনবাসনা পূর্ণ হয়।
দীপান্বিতা অমাবস্যার শ্যামা কালী পূজার দিন কোনও কৃত্রিম আলো ব্যবহার করা হয় না, কারণ গ্রামবাসীদের দাবি কৃত্রিম আলো ব্যবহার করলে গ্রামে নেমে আসে বিপদ। গ্রামবাসীরা জানান, এক বছর কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বার নাকি গ্রামে নেমে এসেছিল বিপদ। তারপর থেকে আর অন্য কোনও আলো ব্যবহার করা হয় নি।
বলি প্রথাও প্রচলিত আছে কেশবপুরে। গ্রামের মানুষের দাবি, ছাগল বলি দেওয়ার সময় মা কালীর শান্ত মূর্তি আস্তে আস্তে রুদ্র রূপে পরিণত হয়। তাঁকে শান্ত করতেই মায়ের আদেশে কোমরে লোহার শিকল দিয়ে মন্দিরের পিছনে থাকা বালার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। বলি শেষে খুলে দেওয়া হয় শিকল। এই প্রথা আজও মেনে আসছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। আজও পুজোর সময় সংকল্প করা হয় বর্ধমানের মহারাজার বংশের বংশধরদের নামে।