হুগলি: জমি থেকে বিক্রি হওয়া ৭৫০ টাকার আলু কীভাবে পৌঁছলো ১০৫০ টাকায়? কারা বাড়াল বস্তা পিছু ৩০০ টাকা করে দাম? কাদের পকেটে যাচ্ছে সেই ৩০০ টাকা? কৃষকরা পাচ্ছেন নাকি পুঁজিপতিদের পকেটে ঢুকছে টাকা?উঠছে প্রশ্ন।
এবছর মাঠ থেকে আলু তোলার সময় কৃষকরা কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে বিক্রি করেছিলেন। এক বস্তায় থাকে ৫০ কেজি আলু। অর্থাৎ এক বস্তার দাম ছিল ৭৫০ টাকা। আর বাজারে তিন মাস ধরে দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এপ্রিল মাসের শেষ থেকে সংরক্ষিত আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। নতুন আলু ওঠার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।
বর্তমানে সংরক্ষিত আলু কৃষকরা বিক্রি করছেন ২২ টাকা প্রতি কেজি দরে, খুচরো বাজারে সেই আলুর দাম গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। অর্থাৎ বস্তা পিছু দাম বেড়ে হচ্ছে ১০৫০ টাকা বা তারও বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ টাকা করে দাম বাড়ছে বস্তা পিছু।
প্রশ্ন হল, মাঠ থেকে আলু তোলার পর বাজারে গিয়ে দাম কীভাবে বেড়ে যায়?
-মাঠ থেকে আলু বিক্রি হল কেজি প্রতি ১৫ টাকা অর্থাৎ ৭৫০ টাকা প্রতি বস্তা। সেটা বেড়ে হয়ে গিয়েছে ১০৫০ টাকা।
– ৫০ কেজি আলুর বস্তা জমি থেকে হিমঘর পর্যন্ত পৌঁছতে খরচ হয় ৬৫ টাকা। হিমঘরের ভাড়া ৯১ টাকা। হিমঘর থেকে আলু বের করা ও বাছাই, ওজন সহ অন্যান্য খরচ হল ৩০ টাকা।
আলু চাষের অনুকূল আবহাওয়া না থাকার কারণে এবার বস্তা পিছু আলুর পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩ থেকে ১০ কেজি, যার মূল্য কম-বেশি প্রায় ১৬৫ টাকা।
কলকাতা সহ অন্যান্য বাজারে আলু পৌঁছতে গাড়ি ভাড়া লাগে ৬০ টাকা। ভ্যান ভাড়া লাগে ১৫ টাকা।
অর্থাৎ জমি থেকে হিমঘর এবং হিমঘর থেকে খুচরো বাজার পর্যন্ত আলু পৌঁছতে মোট খরচ হয় ৪২৬ টাকা প্রতি বস্তা। সে হিসেবে বস্তা পিছু দাম হওয়া উচিত ছিল (৪২৬+৭৫০) ১১৭৬ টাকা, অর্থাৎ কিলো প্রতি প্রায় ২৫ টাকা।
কিন্তু বর্তমানে সংরক্ষিত আলু, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বিক্রি করছেন ১০৫০ টাকা প্রতি বস্তা হিসেবে। এক বস্তা (৫০ কেজি)আলুর দাম দাঁড়িয়েছে (৪২৬+১০৫০) ১৪৭৬ টাকা। অর্থাৎ কিলো প্রতি প্রায় ৩০ টাকা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে জমি থেকে বিক্রি হওয়া ৭৫০ টাকার আলু কীভাবে ১০৫০ টাকায় পৌঁছল? কারা বাড়াল বস্তা পিছু ৩০০ টাকা দাম? কাদের পকেটে যাচ্ছে এই টাকা?
বাড়তি ৩০০ টাকা কি আদৌও কি পাচ্ছেন কৃষকরা? নাকি পুঁজিপতিদের পকেটে ঢুকছে বস্তা পিছু ৩০০ টাকা?
হিমঘরের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে প্ৰয়োজনীয় আলুর যোগানে নেই কোনও ঘাটতি। প্রতি বছর রাজ্যে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে এবছর ফলন কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যে খাওয়ার জন্য লাগে ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। হিমঘরে মজুত করা হয়েছিল ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
এপ্রিলের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত হিমঘরে মজুত থাকা আলু ৯ মাস ধরে খাওয়ার জন্য বের করা হয়। হিসেব অনুযায়ী আগামী ৬ মাসে আলুর প্রয়োজন ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন আর হিমঘরে মজুত আছে ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন।