কোন্নগর: স্বামীর মাথায় টাক। বিয়ের পর থেকে তা কিছুতেই পছন্দ ছিল না। এদিকে বিয়ের পর বান্ধবীর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। মন্দিরে মালা বদলও হয়। ছেলেকে বাড়িতে রেখে দিল্লিতে ঘুরতেও গিয়েছিল দু’জনে। ঘুরতে গিয়েছিল বিহারেও। সেখানে একসঙ্গে রাতও কাটান দুই বান্ধবীতে। কোন্নগরে আট বছরের শিশু খুনে পুলিশের হাতে শান্ত শর্মার নামে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্যই উঠে এসেছে। বান্ধবীর সঙ্গে স্ত্রীর দীর্ঘ সম্পর্ক, ঘোরাঘুরি, রাত্রিবাসের কথা বলছেন খোদ শান্তার স্বামী পঙ্কজ শর্মা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁর ৮ বছরের ছেলেকেই বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। তদন্তে নেমে ঘটনার চারদিন পর পুলিশ শিশুর মা শান্তা শর্মা ও তার বান্ধবী ইফ্ফাত পারভিনকে গ্রেফতার করে। শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে পুলিশ তাঁদের ৯ দিনের পুলিশ হেজাজতের নির্দেশ দেয়। তাঁদের জেরা করেই এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে।
সূত্রের খবর, বিয়ের পর থেকেই শান্তা শর্মার সঙ্গে তাঁর স্বামীর প্রায়শই অশান্তি হত। মাঝেমধ্যে তা চরমেও উঠে যেত। স্বামীর টাক একদমই পছন্দ ছিল না তাঁর। সঙ্গে পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা। তাতে নিয়ে বিবাদ লেগে থাকত। এরইমধ্যে বান্ধবী পারভিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়তে থাকে বলে খবর। দুজনের মোবাইল ঘেঁটে তাঁদের একসঙ্গে কাটানো বেশ কিছু ছবিও পেয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে বিয়ে হয়েছিল পারভিনের। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যে তাঁর বিয়ে ভেঙে যায়। সূত্রের খবর, পরের বছর কলকাতার একটি মন্দিরে দু’জনে মালা বদলও করেন। একাধিক জায়গায় ছেলেকে রেখেও ঘুরতে যান শান্তা। বান্ধবীর সঙ্গে কাটান রাত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, তাঁদের সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ছেলে। সেখান থেকেই খুনের পরিকল্পনা। এদিকে কল রেকর্ড বলছে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কথা হত দুই বান্ধবীর। কিন্তু, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ছিল না কোনও কল। এটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁরা যে ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত করবেন সেটা অনুমান করেই আগে থেকেই দুই বান্ধবী ফোনালাপ বন্ধ রেখেছিলেন। যাতে তাঁদের দিকে সন্দেহের তির না যায়। তবে ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে সাড়ে ছ’টা নাগাদ শিশুকে খুন করা হয়। তার ১৫ মিনিট আগে শান্তা ও পারভিনের কথা হয়। সেই সূত্রই শেষ পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে গতি আনে। কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আচ্ছেলাল যাদব জানিয়েছেন, শান্তা-পারভিনের সম্পর্কের কথা পরিবারও জানত। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে কিছু বলত না। কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আচ্ছেলাল যাদব আবার বলছেন, দুই মহিলার সম্পর্কের কথা পরিবারের সদস্যরাও জানতেন। কিন্তু, সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে কিছু বলতে পারেননি।