
আরামবাগ: আবারও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে কৃষকরা (Farmer)। এক সময় হুগলির সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন দেখেছে গোটা বাংলা। দেখেছে ভাবদিঘি আন্দোলন। আবারও কি জমি আন্দোলন দেখতে চলেছে রাজ্যবাসী? হুগলির গোঘাটের কৃষকদের দাবি, জোর করে জমি দখল করা হলে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে তিনটি আর্থিক করিডর হচ্ছে। খড়গপুর-মোড়গ্রাম, হলদিয়া-রক্সৌল-কলকাতা ও বারাণসী করিডরের জন্য ইতিমধ্যেই প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। এমনকী সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ইতিমধ্যেই ল্যান্ডম্যাপ সুনিশ্চিত করছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। সেই মতো এবার হতে চলেছে জমি অধিগ্রহণ।
খড়গপুর-মোড়গ্রাম করিডেরের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছে। পোঁতা হয়েছে পিলার। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে হুগলি ঢুকতেই বিপত্তি। নিজেদের জমি ছাড়াতে নারাজ কৃষকরা। ন্যায্য দামের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। তিন ফসলি জমির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পেলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। জমির পরিবর্তে জমি চাই। বলছেন আদিবাসী কৃষকরা। জমি চলে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাবেন প্রান্তিক কৃষকরা তাদের দাবি চাকরি চাই।
উল্লেখ্য, সিঙ্গুরের জমির সঙ্গে গোঘাট ২ নম্বর ব্লকের এই এলাকার জমির উর্বরতা আকাশ জমিন তফাত। অর্থাৎ সিঙ্গুরের জমির যদি ক্ষমতা একগুণ থাকে এই এলাকার জমির ক্ষমতা তার থেকে অনেক গুণ বেশি। সিঙ্গুরের জমি যদি দু ফসলি তিন ফসলি হয়ে থাকে গোঘাট দুই ব্লকের চাষিদের জমি ৪ ফসলি অর্থাৎ বছরে চারটি ফসল এখানে খুবই ভালভাবে হয়।
এই এলাকায় সেচের খুব ভাল ব্যবস্থা থাকায় জলের কোনও সমস্যা হয় না কৃষিক্ষেত্রে। হুগলির গোঘাট ২ ব্লকের পশ্চিমপাড়া, গুরুলিয়া- ভাতশালা, লস্করপুকুর, মুল্লুক, মেহেরবানপুর, সাতবেড়িয়া, আগাই প্রভৃতি এলাকার উপর দিয়ে যাচ্ছে খড়গপুর থেকে মোড়গ্রাম পর্যন্ত ন্যাশনাল হাইওয়ে রাস্তা। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ এবং হাইওয়ে মন্ত্রকের এই রাস্তা তৈরির জন্য সমস্ত কিছু ছাড়পত্র শেষ। দু’দুবার কাগজে সরকারি নিয়ম মোতাবেক ঘোষণা করে বিজ্ঞাপন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে টাকাও দিয়ে দিয়েছে কৃষকদের জমির মূল্য দেওয়ার জন্য। ঠিক এমনই সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে গত দু-তিন দিন ধরে গোঘাট ২ ব্লকের বিডিওর নির্দেশে শ্যামবাজার, পশ্চিমপাড়া সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে কৃষকদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিয়েছে তাদের যাবতীয় কাগজপত্র জমির পর্চা ব্যাংকের বই এর প্রথম পাতার জেরক্স সহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে গোঘাট ২ বিডিও অফিসে সংশ্লিষ্ট সেলের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে।
জমির কাগজ খতিয়ে দেখতে বিডিও অফিসের নির্দিষ্ট পক্ষে বসছেন ন্যাশনাল হাইওয়ের আধিকারিকরা। ঠিক এই সময়ে কৃষকদের ক্ষোভ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। লস্করপুকুর মুল্লুক সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বলেন, “যে জমির উপর দিয়ে এই হাইওয়ে যাচ্ছে সেই জমি তাদের কাছে মায়ের মত। এই জমি সোনার জমি। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমরা দিতে রাজি আছি। কিন্তু যেভাবে জমির মূল্য দেওয়া হবে শুনছি এত কম দামে আমরা জমি দেব না। তার জন্য যদি আমাদেরকে আন্দোলন করতে হয় আমরা করব। যদি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয় আমরা হব। আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র সম্বল ওই জমি আধা মূল্যে দেব না।”
ইতিমধ্যে অনেক কৃষক গোঘাট ২ ব্লকে গিয়ে বিডিও সহ সংশ্লিষ্ট দফরের যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাদের কাছে গিয়ে ক্ষোভ- বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধাকারীরা তাদেরকে বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে আরও একটা সিঙ্গুরময় পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
লস্করপুকুর গ্রামের কয়েকজন কৃষকের কথায়, “আমরা বিডিও অফিসে গিয়ে দাম সম্পর্কে এক আধিকারিককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন বর্তমান রেজিস্ট্রি অফিসে যে মূল্যে ওই এলাকার জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে তার দ্বিগুণ এর একটু বেশি দাম পাবেন চাষিরা। যেদিন থেকে নোটিফিকেশন জারি হয়েছে সেদিন থেকে টাকা নেওয়ার দিন পর্যন্ত আরও ১০ শতাংশ ইন্টারেস্ট পাবেন চাষীরা। অর্থাৎ এই এলাকার জমির বর্তমান সরকারি ভ্যালু যদি ৫ লক্ষ টাকা বিঘা অর্থাৎ কুড়ি কাটার ( ৪০ শতক)দাম হয় হয় চাষিরা এক বিঘা জমি দিয়ে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা পাবেন। কিন্তু ওই এক বিঘা জমি থাকলে একটি পরিবারের ৩-৪ জন হেসে খেলে সারা জীবন মোটা ভাত মোটা খেয়ে কাপড় পরে বাঁচতে পারবেন।”