কোন্নগর: কোন্নগরে শিশু খুনের মোটিভ নিয়ে ধন্দ কাটার যেন নামই নিচ্ছে না। ক্রমেই বাড়ছে জটিলতা। বারবারই উঠে আসছে মৃত শিশুর মায়ের সমকামী প্রেমের কথা। সূত্রের খবর, দুই পৃথক থানায় রেখে ধৃত দুই মহিলার জেরা চললেও একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে দু’জনেই উতলা হয়ে উঠছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোন্নগরে নিজের ঘরে খুন হয় ৮ বছরের শিশু শ্রেয়াংশু শর্মা। তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনার ৪ দিন পর শিশুর মা শান্তা শর্মা ও তাঁর বান্ধবী ইফফাত পারভিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকেই তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন মোড়। ইতিমধ্যেই শোনা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই বরকে তাঁর টাক মাথার জন্য পছন্দ ছিল না শান্তার। বান্ধবীর সঙ্গে দিনে দিনে বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। এমনকী তাঁরা মালাবদলও করেছিলেন বলে শোনা যায়।
সূত্রের খবর, একাধিকবার তাঁরা দেশের নানাপ্রান্তে একসঙ্গে ঘুরতেও গিয়েছেন। রাত্রিবাসও করেছেন একসঙ্গে। ছেলেকে রেখে গিয়েছেন বাড়িতে। কিন্তু খুন কেন? সমকামী সম্পর্কে ছেলে পথের কাঁটা হলে তাকে ছেড়ে বান্ধবীর সঙ্গে চলে যেতেই পারতেন শান্তা। কিন্তু খুনের প্রয়োজন তবে কেন পড়ল? তবে কী স্বামী-সহ গোটা শ্বশুরবাড়িকে শিক্ষা দিতে চরম সিদ্ধান্ত? যার বাস্তবিক রূপ পেয়েছে এই নৃশংস হত্যকাণ্ডে? ভাবাচ্ছে পুলিশকে। শ্রেয়াংশুকে আবার তাঁর মা প্রায়শই লাঠি দিয়ে খুব মারধর করত বলে শোনা গিয়েছে। যদিও শান্তার দাবি পড়াশোনা ঠিক করে না করলেই তিনি মারতেন। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।
গ্রেফতারির পর শান্তা ও ইফফাতকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁদের ৯ দিনের পুলিশ হেফাজত দেয়। বর্তমানে শ্রীরামপুর মহিলা থানায় রয়েছেন ইফফাত। উত্তরপাড়া থানায় রয়েছেন শান্তা। টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন চন্দননগর পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। কিন্তু, এত বড় কাণ্ডের পর শান্তার নির্লিপ্ত ভাব ভাবাচ্ছে পুলিশকে। কপালে ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে দুঁদে পুলিশ কর্তাদেরও। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিয়ে করলেও স্বামীকে কখনওই ভাল লাগেনি শান্তার। আর্থিক অবস্থা নিয়ে বাড়িতে ঝামেলা চলত। পঙ্কজ শর্মার সঙ্গে বিয়ের ২ বছরের মাথায় জন্ম হয় শ্রেয়াংশুর। নাতিকে পেয়ে খুশিতেই ছিলেন শান্তার শ্বশুর ওম প্রকাশ ও শাশুড়ি প্রেমলতা শর্মা। কিন্তু, ছেলে-বউয়ের অশান্তিতে তাঁদের সেই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এদিকে পঙ্কজ জানাচ্ছেন বিয়ের পর থেকেই মাসে অন্তত দু থেকে তিনবার তাঁদের বাড়িতে আসতেন ইফতাত। আগ্রায় তাজমহলও দেখতে গিয়েছিলেন শান্তা-ইফফাত। এ প্রসঙ্গ উঠতেই খোঁচা দিচ্ছেন কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আচ্ছেলাল যাদব। তিনি বলছেন, তাজমহল তো প্রেমের প্রতীক। নিজেরা প্রেমে মগ্ন ছিলেন তাই হয়তো দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে ছিল বাড়িতে। এদিকে অনেকেই বলছেন দুই মহিলার মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল তা জানতেন পরিবারের সকলেই। কিন্তু, লোকলজ্জার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি।