হুগলি: ফুরফুরা শরিফে কি নয়া সমীকরণ? রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আর বছর খানেক বাকি। নির্বাচনের আগে কি তৃণমূলের সঙ্গে ফুরফুরা শরিফের রসায়নে নতুন তাস পীরজাদা কাশেম সিদ্দিকী? গত তিনদিনের ঘটনাক্রমে এইসব প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।
সোমবার ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ছিলেন না ফুরফুরার দুই পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ও নওশাদ সিদ্দিকী। অনেক পীরজাদাকেই সেদিন দেখা যায়নি। তবে মমতার পাশে দেখা গিয়েছিল কাশেমকে। তার পর গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতার পার্ক সার্কাসে ইফতারে মমতার পাশে তাঁকে ফের দেখা যায়। তারপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, ফুরফুরা শরিফের সঙ্গে তৃণমূলের রসায়নে কি এবার নেতৃত্ব দেবেন কাশেম সিদ্দিকী?
কে এই কাশেম সিদ্দিকী?
কাশেমও ফুরফুরার একজন পীরজাদা। একসময় ফুরফুরাতে মমতা বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। সেইসময় সিপিএমের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা কারও নজর এড়ায়নি। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আইএসএফ গঠন করেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। ফুরফুরার অন্দরের খবর, আইএসএফ গঠন হওয়ার পর থেকেই আব্বাস ও নওশাদ সিদ্দিকীকে পুরোপুরি সমর্থন করতে শুরু করেন তাঁদের তুতো ভাই কাশেম। এমনকি, ২০২৩ সালে নওশাদ সিদ্দিকীকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর নিয়মিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতেন কাশেম। সেই কাশেমকেই গত ২ দিন দেখা গেল মমতার সঙ্গে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ফুরফুরা শরিফে কি ঠাকুরনগর মডেল ব্যবহার করতে চাইছে তৃণমূল? মতুয়াদের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির শান্তনু ঠাকুর বিজেপির সাংসদ। সেখানে ঠাকুরবাড়ির মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বরাবরই তৃণমূল পন্থী বলে পরিচিত। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এবার কি ফুরফুরায় সমীকরণ বদলাবে? ত্বহা সিদ্দিকীকে সরিয়ে কাশেমকে কি তৃণমূলের মুখ করা হবে?
এই নিয়ে ত্বহা সিদ্দিকী বলছেন, “যে নবান্নের সবাইকে চোর বলেছিল, তাঁকেই এখন মমতার কাছে দেখা যাচ্ছে। ফুরফুরা শরিফ নিয়ে বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ যদি ভাবে যে ফুরফুরা শরিফকে নিয়ে বড়মা, মতুয়াদের মতো করব, তা হতে দেব না। আমরা নীতির উপর চলি। চলব।”
ত্বহা সিদ্দিকীকে পাল্টা নিশানা করে কাশেম বলেন, “ফুরফুরা শরিফে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই, যিনি বেশি চিৎকার করছেন। উনি সবসময় কালো চশমা পরে থাকেন তো, ঠিকঠাক দেখতে পান না।” মমতাকে নিয়ে তিনি বলেন, “ফুরফুরায় এসে মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, কাশেমভাই তুমি আমার খুব কাছের। তোমাদের পুরো পরিবারকে আমি ভালবাসি।”
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, ফুরফুরা শরিফে ত্বহা সিদ্দিকী প্রভাব কিছুটা কমছে। তাছাড়া, বিভিন্ন সময় তিনি নানা দাবি-দাওয়া করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ফুরফুরা শরিফের সঙ্গে রসায়নে নতুন মুখ তুলে আনতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
আবার জল্পনা শুরু হয়েছে যে, নওশাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করতে পারে ফুরফুরার কোনও পীরজাদাকে। সেই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন ত্বহা সিদ্দিকীই। তাঁর বক্তব্য, নওশাদ যদি মমতার কথা না শোনেন, তাহলে ভাঙড়ে কোনও পীরজাদাকে নওশাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল।