হুগলি: সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে কোটি কোটি টাকার তছরূপের অভিযোগ। গ্রেফতার করা হল সমবায়ের ম্যানেজার ও কোষাধ্যক্ষকে। সিঙ্গুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। হুগলির সিঙ্গুরের খাসেরচক চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড। সেখানেই এই অভিযোগ উঠেছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার্স অব কোঅপারেটিভ সোসাইটিজের (DRCS) পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। হুগলি গ্রামীণ পুলিশসুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম সুখেন্দু দাস (ম্যানেজার) ও কৌশিক অধিকারী (কোষাধ্যক্ষ)। তিনি জানান, প্রায় ২ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগ রয়েছে এই দু’জনের বিরুদ্ধে।
সিঙ্গুরের গোপালনগর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে খাসেরচক চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড। এখানে যাঁরা টাকা জমান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ তুলছিলেন। এরপরই ভিতর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু হয়। তাতেই গরমিলের দিকটি সামনে আসে।
তৃণমূল পরিচালিত সমবায়ের পরিচালন সমিতির সেক্রেটারি অশোককুমার দাস সমবায়ের ম্যানেজার ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। এরপর ম্যানেজার ও কোষাধ্যক্ষ একে অপরকে দুষতে শুরু করেন। এদিকে গ্রাহকদের ক্ষোভ বাড়ছিল। ময়দানে নামে বাম কৃষক সংগঠন। ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকদের সমস্যার কথা শোনেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও।
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছিল। এরইমধ্যে গত ১৬ জুন ডেপুটি রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি সিঙ্গুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন তিনি। এরপরই তদন্ত শুরু হয়। গ্রেফতার হন ম্যানেজার ও কোষাধ্যক্ষ। ধৃতদের মঙ্গলবার চুঁচুড়া বিশেষ আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
পুলিশ সুপার আমন দীপ জানান, ডিআরসিএস থেকে সমবায়ের ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে প্রায় ২ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার গরমিলের অভিযোগ আসে। এরপরই সুনির্দিষ্ট কেসের দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়। আরও কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা মধুসূদন দাসের দাবি, এই বোর্ড তৃণমূল পরিচালিত। বোর্ড ছাড়া কিছু পাশ করা সম্ভব নয়। শুধু ম্যানেজার বা কোষাধ্যক্ষ জড়িত, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ভোট দোরগোড়ায় বলেই হয়ত দু’জনকে গ্রেফতার দেখানো হল, দাবি বিজেপি নেতার।
যদিও সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ধারার দাবি, পরিচালন সমিতিকে অন্ধকারে রেখেই এইসব তছরূপ করা হয়েছে। বোর্ডের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তে যদি কোনও বোর্ডের সদস্যর দোষ সামনে আসে, তাকেও সাজা পেতে হবে। তৃণমূল কোনও অপরাধীকে ছাড় দেয় না।