Padma Shri Narayan Debnath: নিজের হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুলের ভার নাতির হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন ৯৮ বছরের ‘তরুণ’ পদ্মশ্রী

Shubhendu Debnath |

Dec 01, 2021 | 8:27 PM

Padma Shri Awardees: ২০১২ সালে ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল হাঁদা ভোঁদার। নারায়ণবাবুর সময় থেকে হিসেব করলে হাঁদা ভোঁদার বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। অন্যদিকে ১৯৬৫ সালে আত্মপ্রকাশ করা বাঁটুল ২০২১ সালে ৫৬ বছরে পা রেখেছে। নন্টে ফন্টেও ১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরে পা রেখেছে ৫২ বছরে । একই কার্টুনিস্টের তিনটি কার্টুনের প্রতিটির ৫০ বছর ধরে চলা বিরল। সেখানেই ব্যতিক্রমী নারায়ণ দেবনাথ।

Follow Us

শু ভে ন্দু দে ব না থ

কারও কাছে তিনিই স্বয়ং হাঁদা কিংবা ভোঁদা, আবার কারও কাছে তিনি বাঁটুল। হাজারো দুষ্টুমিতে তাঁর বয়স বোঝে সাধ্য কার। শিশু মনের অলিতে গলিতে তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি নারায়ন দেবনাথ। ৯৮ বছরের তরুণ এখনও তিনি, অসুস্থ কিন্তু অশক্ত নন। বয়স এবং রোগ তাঁর শরীরে থাবা বসালেও মনের ভেতর কব্জা করতে পারেনি এখনও। এই বয়সে কানে কম শোনেন,  শয্যাশয়ী, কিন্তু যদি এখনও তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে কথা বলা যায়, যদি তাঁর মনের গভীরে পৌঁছনো যায়, তাহলে এখনও নির্মল আনন্দে হেসে ওঠেন তিনি।

দেরিতে হলেও বাংলা এবং ভারতের অন্যতম সেরা পুরস্কারগুলি পেয়েছেন তিনি। অনেকেই তাঁকে সাহিত্যিক আখ্যা দিতে নারাজ, তাও ২০১৩য় তিনি পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার। আর এ বছর ২০২১ এ তিনি পেলেন সেরার সেরা একেবারে পদ্মশ্রী পুরস্কার। কিন্তু পুরস্কারই হোক বা জনপ্রিয়তা, এসব নিয়ে কোনও দিন মাথা ঘামাননি বাঁটুলের স্রষ্টা। তাঁর মতে, ‘পেলেও ভাল, না পেলেও ক্ষতি নেই।’ কারণ তিনি বাংলা কার্টুনকে নিয়ে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, সেখান থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

অথচ কার্টুনিস্ট হওয়ার কথা ছিল না নারায়ণবাবুর। কারণ পারিবারিক জীবিকা ছিল স্বর্ণকারের। বাবার দোকানেই মাঝে মাঝে বসতেন, সেখানেই গয়নার নকশা করতে ভাললাগত তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের সময় সেই ভাল লাগা থেকেই ভর্তি হন আর্ট কলেজে। পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্স শেষ বছরে এসে ছেড়ে দেন তিনি। এরপর কাজ নেন একটি প্রিন্টিং প্রেসে, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে দেব সাহিত্য কুটিরের হাত ধরে কার্টুনের জগতে প্রবেশ তাঁর।

তবে অনেকেই জানেন না হাঁদা ভোঁদার প্রথম স্রষ্টা কিন্তু তিনি নন। শুকতারার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৫০-এর দশকে শুকতারায় হাঁদা-ভোঁদার নামে একটি কমিকস বেরোত অনিয়মিত ভাবে। সেই কমিকসে ‘ছবি ও কথা’র জায়গায় থাকত একটি বোলতার ছবি। ওই বোলতাটি আসলে তখনকার দিনের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিগনেচার। তবে ১৯৬২ সালে দেব সাহিত্য কুটিরের উদ্যোগে নারায়ণবাবু হাঁদা-ভোঁদাকে পরিমার্জন ও সংশোধন করে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ২০১২ সালে ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল হাঁদা ভোঁদার। নারায়ণবাবুর সময় থেকে হিসেব করলে হাঁদা ভোঁদার বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। অন্যদিকে ১৯৬৫ সালে আত্মপ্রকাশ করা বাঁটুল ২০২১ সালে ৫৬ বছরে পা রেখেছে। নন্টে ফন্টেও ১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরে পা রেখেছে ৫২ বছরে । একই কার্টুনিস্টের তিনটি কার্টুনের প্রতিটির ৫০ বছর ধরে চলা বিরল। সেখানেই ব্যতিক্রমী নারায়ণ দেবনাথ।

নারায়ণবাবুকে কার্টুনিস্ট হিসেবে ধরা হলেই শুধুমাত্র কার্টুনেই তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বহু বই এবং পত্রপত্রিকার প্রচ্ছদও করেছেন। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে মনোরঞ্জন ঘোষের ‘পরিবর্তন’ নামে একটি গল্প সংকলনের অলঙ্কারও করেন তিনি। এই বইটির প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৫০ সালে। পরে বইটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বইটি ১৯৭২ সালে পুনর্মুদ্রিত হওয়ার সময় তার অলঙ্করণের দায়িত্ব এসে পরে নারায়ণবাবুর কাঁধে। এই বইটি থেকে একটি বাংলা চলচ্চিত্র এবং ১৯৫৫-য় ‘জাগৃতি’ নামে একটি হিন্দি ছবিও হয়।

নিজের সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে কোনটি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়? দীর্ঘদিনের পরিচয় এবং আত্মীয়তার সূত্রে এই প্রতিবেদকের শিশু বয়সের এক প্রশ্নের জবাবে হাসি খেলে গিয়েছিল স্রষ্টার মুখে। চোখ নাচিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার কী মনে হয়’। তারপর বলেছিলেন ‘বাঁটুল’। প্রথমদিকে বাঁটুল খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি।কিন্তু ষাটের দশকে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাঁটুলকে অতিমানবিক শক্তি দেন নারায়ণবাবু। সেই সময় বাঁটুলকে দেখা যায় অবলীলায় শত্রুপক্ষের প্লেন, যুদ্ধ জাহাজ, ট্যাঙ্কার ছুঁড়ে ছুঁড়ে ধ্বংস করতে। বাঁটুলই বাঙালির প্রথম সুপার হিরো। সরু পা, সরু কোমর, আর বিশাল বুকের ছাতি নিয়ে শুকতারা পত্রিকা বাঁটুল কার্টুন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

সারা জীবন পাঠকের সমাদর পেলেও বাংলা সাহিত্য জগত থেকে কম অপমানিত হননি তিনি। অনেকেই তাঁকে সাহিত্যিক আখ্যা দিতে চাননি। আবার পুরস্কারের ক্ষেত্রেও জীবনের শেষপ্রান্তে এসে জুটেছে তা। অভিমান আছে তাঁর। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বাংলা সাহিত্য জগত তাঁর খোঁজ রাখে না। ছেলে তাপসবাবু জানান, ২০১৩-য় মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়েছিলেন। তখনই ঘোষণা হয়েছিল শিল্পা ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত সেই ভাতা নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়লেও, তারপর থেকে একবারও সে ভাতা পাওয়া যায়নি। নবান্নে অনেকবার তদ্বীর করলেও কেনও সে ভাতা আর আসে না এখনও তা জানেন না তাপসবাবু। অথচ নারায়ণবাবুর রোজকার দেখভালের খরচ বাড়ছে।

শিবপুর বাজারের ভেতরের বাড়িতে এখন একটি খাটে একা শুয়ে থাকেন বাংলা কার্টুন জগতে দাপিয়ে বেড়ানো নারায়ণবাবু। একা একা খাট ছেড়ে নামার উপায় তাঁর নেই,কানেও শোনেন না সেভাবে। বর্তমানে টিভির পর্দায় চলা তাঁর কার্টুন চরিত্রগুলোর গল্প পাল্টে দেখানো হয়, নির্মল মজার জায়গায় সেখানে থাকে নানা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও। তাই এক সময় অভিমানে বলেছিলেন তাঁর পর আর কেউ যেন হাত না নেয় তাঁর তৈরি করা কার্টুন চরিত্রগুলোতে। চলতি মাসেই ৯৮ পেরোনো নারায়ণবাবু প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলে ওঠেন, তাঁর ছোটো নাতি চাইলে আঁকতে পারেন হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল কিংবা নন্টে ফন্টেকে। পারবে? প্রশ্ন করায় নির্মল পরিতৃপ্তির হাসি হেসে স্রষ্টা জবাব দেন, ‘চেষ্টা করলে কেনও পারবে না, নিশ্চই পারবে’। নিজের উত্তরাধিকারী প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে নিজের হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুলের ভার ছোটো নাতির হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন ৯৮ বছরের তরুণ পদ্মশ্রী।

আরও পড়ুন: Padma Shri Biren Kumar Basak: ‘দ্যাশ’ হারিয়ে পেয়েছন দেশ, উদ্বাস্তু তাঁতি বীরেনই ভারতের পদ্মশ্রী

শু ভে ন্দু দে ব না থ

কারও কাছে তিনিই স্বয়ং হাঁদা কিংবা ভোঁদা, আবার কারও কাছে তিনি বাঁটুল। হাজারো দুষ্টুমিতে তাঁর বয়স বোঝে সাধ্য কার। শিশু মনের অলিতে গলিতে তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি নারায়ন দেবনাথ। ৯৮ বছরের তরুণ এখনও তিনি, অসুস্থ কিন্তু অশক্ত নন। বয়স এবং রোগ তাঁর শরীরে থাবা বসালেও মনের ভেতর কব্জা করতে পারেনি এখনও। এই বয়সে কানে কম শোনেন,  শয্যাশয়ী, কিন্তু যদি এখনও তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে কথা বলা যায়, যদি তাঁর মনের গভীরে পৌঁছনো যায়, তাহলে এখনও নির্মল আনন্দে হেসে ওঠেন তিনি।

দেরিতে হলেও বাংলা এবং ভারতের অন্যতম সেরা পুরস্কারগুলি পেয়েছেন তিনি। অনেকেই তাঁকে সাহিত্যিক আখ্যা দিতে নারাজ, তাও ২০১৩য় তিনি পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার। আর এ বছর ২০২১ এ তিনি পেলেন সেরার সেরা একেবারে পদ্মশ্রী পুরস্কার। কিন্তু পুরস্কারই হোক বা জনপ্রিয়তা, এসব নিয়ে কোনও দিন মাথা ঘামাননি বাঁটুলের স্রষ্টা। তাঁর মতে, ‘পেলেও ভাল, না পেলেও ক্ষতি নেই।’ কারণ তিনি বাংলা কার্টুনকে নিয়ে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, সেখান থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

অথচ কার্টুনিস্ট হওয়ার কথা ছিল না নারায়ণবাবুর। কারণ পারিবারিক জীবিকা ছিল স্বর্ণকারের। বাবার দোকানেই মাঝে মাঝে বসতেন, সেখানেই গয়নার নকশা করতে ভাললাগত তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের সময় সেই ভাল লাগা থেকেই ভর্তি হন আর্ট কলেজে। পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্স শেষ বছরে এসে ছেড়ে দেন তিনি। এরপর কাজ নেন একটি প্রিন্টিং প্রেসে, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে দেব সাহিত্য কুটিরের হাত ধরে কার্টুনের জগতে প্রবেশ তাঁর।

তবে অনেকেই জানেন না হাঁদা ভোঁদার প্রথম স্রষ্টা কিন্তু তিনি নন। শুকতারার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৫০-এর দশকে শুকতারায় হাঁদা-ভোঁদার নামে একটি কমিকস বেরোত অনিয়মিত ভাবে। সেই কমিকসে ‘ছবি ও কথা’র জায়গায় থাকত একটি বোলতার ছবি। ওই বোলতাটি আসলে তখনকার দিনের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিগনেচার। তবে ১৯৬২ সালে দেব সাহিত্য কুটিরের উদ্যোগে নারায়ণবাবু হাঁদা-ভোঁদাকে পরিমার্জন ও সংশোধন করে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ২০১২ সালে ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল হাঁদা ভোঁদার। নারায়ণবাবুর সময় থেকে হিসেব করলে হাঁদা ভোঁদার বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। অন্যদিকে ১৯৬৫ সালে আত্মপ্রকাশ করা বাঁটুল ২০২১ সালে ৫৬ বছরে পা রেখেছে। নন্টে ফন্টেও ১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরে পা রেখেছে ৫২ বছরে । একই কার্টুনিস্টের তিনটি কার্টুনের প্রতিটির ৫০ বছর ধরে চলা বিরল। সেখানেই ব্যতিক্রমী নারায়ণ দেবনাথ।

নারায়ণবাবুকে কার্টুনিস্ট হিসেবে ধরা হলেই শুধুমাত্র কার্টুনেই তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বহু বই এবং পত্রপত্রিকার প্রচ্ছদও করেছেন। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে মনোরঞ্জন ঘোষের ‘পরিবর্তন’ নামে একটি গল্প সংকলনের অলঙ্কারও করেন তিনি। এই বইটির প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৫০ সালে। পরে বইটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বইটি ১৯৭২ সালে পুনর্মুদ্রিত হওয়ার সময় তার অলঙ্করণের দায়িত্ব এসে পরে নারায়ণবাবুর কাঁধে। এই বইটি থেকে একটি বাংলা চলচ্চিত্র এবং ১৯৫৫-য় ‘জাগৃতি’ নামে একটি হিন্দি ছবিও হয়।

নিজের সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে কোনটি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়? দীর্ঘদিনের পরিচয় এবং আত্মীয়তার সূত্রে এই প্রতিবেদকের শিশু বয়সের এক প্রশ্নের জবাবে হাসি খেলে গিয়েছিল স্রষ্টার মুখে। চোখ নাচিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার কী মনে হয়’। তারপর বলেছিলেন ‘বাঁটুল’। প্রথমদিকে বাঁটুল খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি।কিন্তু ষাটের দশকে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাঁটুলকে অতিমানবিক শক্তি দেন নারায়ণবাবু। সেই সময় বাঁটুলকে দেখা যায় অবলীলায় শত্রুপক্ষের প্লেন, যুদ্ধ জাহাজ, ট্যাঙ্কার ছুঁড়ে ছুঁড়ে ধ্বংস করতে। বাঁটুলই বাঙালির প্রথম সুপার হিরো। সরু পা, সরু কোমর, আর বিশাল বুকের ছাতি নিয়ে শুকতারা পত্রিকা বাঁটুল কার্টুন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

সারা জীবন পাঠকের সমাদর পেলেও বাংলা সাহিত্য জগত থেকে কম অপমানিত হননি তিনি। অনেকেই তাঁকে সাহিত্যিক আখ্যা দিতে চাননি। আবার পুরস্কারের ক্ষেত্রেও জীবনের শেষপ্রান্তে এসে জুটেছে তা। অভিমান আছে তাঁর। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বাংলা সাহিত্য জগত তাঁর খোঁজ রাখে না। ছেলে তাপসবাবু জানান, ২০১৩-য় মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়েছিলেন। তখনই ঘোষণা হয়েছিল শিল্পা ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত সেই ভাতা নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়লেও, তারপর থেকে একবারও সে ভাতা পাওয়া যায়নি। নবান্নে অনেকবার তদ্বীর করলেও কেনও সে ভাতা আর আসে না এখনও তা জানেন না তাপসবাবু। অথচ নারায়ণবাবুর রোজকার দেখভালের খরচ বাড়ছে।

শিবপুর বাজারের ভেতরের বাড়িতে এখন একটি খাটে একা শুয়ে থাকেন বাংলা কার্টুন জগতে দাপিয়ে বেড়ানো নারায়ণবাবু। একা একা খাট ছেড়ে নামার উপায় তাঁর নেই,কানেও শোনেন না সেভাবে। বর্তমানে টিভির পর্দায় চলা তাঁর কার্টুন চরিত্রগুলোর গল্প পাল্টে দেখানো হয়, নির্মল মজার জায়গায় সেখানে থাকে নানা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও। তাই এক সময় অভিমানে বলেছিলেন তাঁর পর আর কেউ যেন হাত না নেয় তাঁর তৈরি করা কার্টুন চরিত্রগুলোতে। চলতি মাসেই ৯৮ পেরোনো নারায়ণবাবু প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলে ওঠেন, তাঁর ছোটো নাতি চাইলে আঁকতে পারেন হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল কিংবা নন্টে ফন্টেকে। পারবে? প্রশ্ন করায় নির্মল পরিতৃপ্তির হাসি হেসে স্রষ্টা জবাব দেন, ‘চেষ্টা করলে কেনও পারবে না, নিশ্চই পারবে’। নিজের উত্তরাধিকারী প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে নিজের হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুলের ভার ছোটো নাতির হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন ৯৮ বছরের তরুণ পদ্মশ্রী।

আরও পড়ুন: Padma Shri Biren Kumar Basak: ‘দ্যাশ’ হারিয়ে পেয়েছন দেশ, উদ্বাস্তু তাঁতি বীরেনই ভারতের পদ্মশ্রী

Next Article