Padma Shri Biren Kumar Basak: ‘দ্যাশ’ হারিয়ে পেয়েছন দেশ, উদ্বাস্তু তাঁতি বীরেনই ভারতের পদ্মশ্রী
Padma Shri Biren Kumar Basak: চটকাতলা থেকে ডেইলি প্যাসাঞ্জারি করে শাড়ি নিয়ে আসতেন কলকাতায়। ফেরি করতেন দুয়ারে দুয়ারে। সময় যত এগিয়েছে কাঁধ যেন আরও চওড়া হয়েছে তাঁর। এক সময় কাঁধে করে ৯০ কেজি পর্যন্ত শাড়ি ফেরি করেছেন। এখন ৫০০০ হাজার তাঁতির অভিবাক তিনি।
নিজের জন্মভূমির স্বাধীনতা দেখেছেন। অথচ স্বাধীন মাতৃভূমেই ঠাঁই হয়নি। পাকিস্তানের পূর্ব আর পশ্চিমের দড়ি টানাটানির মধ্যেই হতে হয়েছে দেশান্তরী। একাত্তরের স্বাধীনতায় কেউ পেয়েছেন দেশ, আর কেউ হারিয়েছেন ‘দ্যাশ’। বীরেন বসাকের ভবিতব্য ছিল দ্বিতীয়টাই।
সাল ১৯৬২, সদ্য দশ পেরনো কিশোর বীরেন বাবার হাত ধরে চলে এলেন পরবাসে। ‘আদি’ হল বাংলাদেশের টাঙ্গাইল। ‘উদ্বাস্তু’ বসাক পরিবার ছাদ পেল নদিয়ায়। সেই থেকে আজও, বীরেন বসাকের — বীরেন বসাক হয়ে ওঠার সব গল্পই জানা ফুলিয়ার।
৮ বছর বয়সেই তাঁতে হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সেই পারতেন টাঙ্গাইল বুনতে। শাড়ির আঁচলে পদ্ম, মেষশাবক, আঁশ দেওয়া মাছের নকশা করতে পারতেন তুড়ি মেরে।
তিনি পারতেন সনামধন্য একজন শিল্পী হয়েই থেকে যেতে। তবে বীরেন বসাক সেখানেই থেমে থাকেননি। একজন শিল্পীর ‘প্রতিষ্ঠান’ হয়ে ওঠার পিছনে যে তাগিদ থাকা প্রয়োজন তা তাঁর ছিল। আর ছিল বলেই তিনি হলেন অন্য পথের পথিক। ঝুঁকি নিলেন। সাল ১৯৭০। দাদা ধীরেন বসাকের কেনা বাড়ি বন্ধক রেখে ১০ হাজার টাকার ঋণ করলেন। আর সেই টাকায় শুরু করলেন ব্যবসা।
অভাব আর দেনা শোধের তাড়নায় যেন আরও পরিশ্রমী হয়ে উঠলেন বীরেন বসাক। চটকাতলা থেকে ডেইলি প্যাসাঞ্জারি করে শাড়ি নিয়ে আসতেন কলকাতায়। ফেরি করতেন দুয়ারে দুয়ারে। সময় যত এগিয়েছে কাঁধ যেন আরও চওড়া হয়েছে তাঁর। এক সময় কাঁধে করে ৯০ কেজি পর্যন্ত শাড়ি ফেরি করেছেন। এখন ৫০০০ হাজার তাঁতির অভিবাক তিনি। এঁদের মধ্যে ২ হাজারই মহিলা তাঁতি। জনহিতৈষী বীরেন বসাকের কাছে তাঁতিরা তাঁর কর্মচারী নন, ভাই। তাঁরা এক পরিবারের। আর এই ভালবাসাই বীরেন বসাককে দিয়েছে ‘তাঁত সম্রাটের মুকুট’।
অতীতে একাধিক পালক লেগেছে এই মুকুটে। কেন্দ্রীয় সরকারের বস্ত্র মন্ত্রালয়ের শংসাপত্র, শন্ত কবীর অ্যাওয়ার্ড, একাধিক রেকর্ড বুকে নাম, দেশের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ডিলিট উপাধিতে আগেই সম্মানিত হয়েছেন তিনি। এবার মুকুটে বসল সূর্যালোকসম আলোড়িত ‘জহরত’। ভারত বর্ষের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রীতে সম্মানিত বীরেন কুমার বসাক।