
হাওড়া: আনিস কাণ্ডে আমতা থানার পুলিশকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তকারী পুলিশদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিটের দুই শীর্ষ আধিকারিক। ঘটনার দিন কারা কারা ডিউটিতে ছিলেন, তৈরি হল একটি তালিকা। তাঁদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় থানার ওসিকেও। সোমবার রাত সাড়ে দশটার মধ্যে সিটের ডিআইজি সিআইডি অপারেশন মিরাজ খালিদ, বারাকপুর কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার ধ্রুবজ্যোতি দে-র তদন্তকারী দল নিয়ে আমতা থানায় পৌঁছন। রাতে আনিসের বাড়িতে সিট কর্তাদের যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। কিন্তু তাঁরা যাননি। তদন্তের প্রথম দিনই, আমতা থানার পুলিশ কর্তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করলেন তাঁরা। আনিসের পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। সেটি স্পষ্ট করতেই প্রথমে এই দিকেই নজর দেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিন থানায় কারা কারা ডিউটিতে ছিলেন, সেটা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিন আনিসের বাড়ির অদূরেই জলসা ছিল। সেখানেও পুলিশ মোতায়েন ছিল। অর্থাৎ কোন পুলিশ কোথায় কর্মরত ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আপাতত সেই তথ্য সংগ্রহ করেছে সিট। ভোর পৌনে চারটে পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ। মঙ্গলবার ফের আনিসের বাড়িতে সিটের যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আনিস কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। ১৯ তারিখ অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ কি আদৌ আনিসের মিসিং মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করেছিল? করলে পুলিশ আগেই জানতে পারত, মোবাইল আনিসের বাড়িতেই আছে। একুশ তারিখ পরিবারের লোকজন না বলা পর্যন্ত পুলিশ জানতেই পারল না মোবাইল বাড়িতে। মোবাইল ট্রাক করল না কেন পুলিশ?
দ্বিতীয়ত, কেন তিনদিন কেটে যাওয়ার পরও পুলিশ স্কেচ তৈরি করল না? আনিসের বাবা বার বার বলছেন ওই রাতে যারা এসেছিল তাদের দেখলে চিনতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শণাক্তকরণের কেন চেষ্টা হল না? আনিসের গ্রামে ঢোকার রাস্তায় সিসিটিভি আছে। কেন পুলিশ সেই ফুটেজ চেক করল না। তাহলে জানা যেত ওই রাতে কারা গ্রামে ঢুকেছিল?
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন গ্রামের এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ঘটনার পর নিজে থেকে মন্ত্যব্য করলেন, যে আনিস আত্মহত্যা করেছেন।শুরু থেকেই আনিসের পরিবার অভিযোগ করেছে, ওই রাতে পুলিশ এসেছিল। তার পর কেন জেলা পুলিশ আমতা থানার পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করল না। তবে সিট তদন্ত শুরু করেই প্রথমে পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের ঘটনার দিন মোবাইল টাওয়ার লোকেশন চেক করছে। এই কাজ কেন আগেই জেলা পুলিশ করল না? তাহলে শুরু থেকেই কি জেলা পুলিশ কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছিল? আসল রহস্যর কিনারা না করতে পারলেও, হঠাৎ কেন জেলা পুলিশ আনিসের পুরোনো মামলা নিয়ে সরব হয়ে উঠল? প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। তবে এই সবই খতিয়ে দেখছেন সিটের আধিকারিকরা।
এদিকে, আনিস কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে আজ ফের প্রতিবাদ। বাড়ছে আন্দোলনের ঝাঁঝ। আজ মহাকরণ অভিযান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। আলিয়া ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে সিআইডি রোড ধরে মৌলালি মোড়। এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ডোরিনা ক্রসিং হয়ে মহাকরণের পথে।
আরও পড়ুন: ‘আগে দোষীরা শাস্তি পাক তারপর…’ নবান্নর দেওয়া চাকরির প্রস্তাব ফেরালেন আনিসের বাবা