
উলুবেড়িয়া: সরকারি হাসপাতালে ঢুকে মহিলা চিকিৎসকের উপর চড়াও অস্থায়ী হোমগার্ড। অভিযোগ, মারধর ও শ্লীলতাহানীরও। উলুবেড়িয়া জুড়ে পড়ল শোরগোল। অস্বস্তি বাড়ল শাসকদলের অন্দরে। সোমবার সন্ধ্য়ায় শেখ বাবুলাল নামে ট্র্যাফিক গার্ডের এক অস্থায়ী পুলিশ কর্মী তাঁর গর্ভবতী ভাইঝিকে নিয়ে পৌঁছে যান উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেখানে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এরপরই ঘটে বিপত্তি।
বাবুলালের অভিযোগ, ভাইঝিকে সময় মতো প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হলেও, চিকিৎসকরা একবারের জন্য তাঁকে দেখতে আসেনি। এরপরেই সেই সময় কর্তব্যরত লিজা কোলে নামে এক মহিলা চিকিৎসকের কাছে দ্বারস্থ হন বাবুলাল ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী। শুরু হয় বচসা। কেন কোনও চিকিৎসক তাঁর ভাইঝিকে দেখতে যায়নি, এই অভিযোগ তুলেই হাসপাতাল মাথায় তোলেন বাবুলাল। উত্তেজনার পারদ চড়ে ক্ষণিকের মধ্য়েই। অভিযোগ, বচসার মাঝেই মহিলা চিকিৎসককে মারধর করেন ওই অস্থায়ী পুলিশ কর্মী ও তাঁর সঙ্গীরা।
বাবুলালের তোলা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিন আক্রান্ত চিকিৎসক বলেন, ‘ওই রোগী ভর্তি হওয়ার পর তাঁকে দেখতে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু সে যন্ত্রণায় এতটাই কষ্ট পাচ্ছিল যে নিজের অজান্তেই আমাকে লাথি মেরে দেয়। তারপরও আমি চিকিৎসা করি। এই ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন প্রায় বিকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে। ৬টায় ভিজিটিংয়ের সময় শেষ হয়। তারপর আবার সিনিয়র কোনও চিকিৎসক আসেন চেক আপ করতে। রোগীর পরিবারকেও আমি সেই কথাই জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেই উত্তেজনা বাড়ে।’
চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘আমার হাত মুছড়ে দিয়েছে, মারধর করেছে। হুমকি দিয়ে বলেছে, আমি হাসপাতালের বাইরে পা রাখলে মেরে ফেলবে। ওদের মধ্য়েই একজন আবার বারংবার বলছিলেন, তিনি শাসকদলের নেতা ও পুলিশে বড় আধিকারিক। কীভাবে আমি জ্যান্ত বাড়ি ফিরি, সেটা উনি বুঝে নেবেন।’ উল্লেখ্য, গতকাল দু’পক্ষের মধ্য়ে চলা উত্তেজনার মাঝেই ছুটে আসেন হাসপাতালে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা। অভিযুক্ত বাবুলালকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তাঁরা। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত মহিলা চিকিৎসকের বয়ানের ভিত্তিতে ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী হোমগার্ডের চাকরির পাশাপাশি বাবুলাল তৃণমূলের ‘ফুল-টাইম’ কর্মী। এলাকায় ভালই নামডাক। নেতা বললেও ভুল হবে না। সঙ্গে আবার উলুবেড়িয়া পুরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুক্লা ঘোষের ঘনিষ্ঠ। এদিনের ঘটনার পর টিভি৯ বাংলার তরফে ওই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, ‘এখন সবাই তৃণমূল কর্মী, বাবুলাল এমন কোনও নেতা নয়।’ অবশ্য, দলীয় সূত্রে খবর, উলুবেড়িয়ার সংখ্য়ালঘু মোর্চার সভাপতি এই বাবুলাল।