বর্ধমান: স্বামী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। যা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলেন স্ত্রী। এর জন্য মর্মান্তিক পরিণতি হল তাঁর। স্ত্রীর গায়ে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। শুধু স্বামী নয়, শ্বশুর, শাশুড়িও গৃহবধূর উপর অ্যাসিড হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। নৃশংসতার এখানেই শেষ নয়, অ্যাসিডদগ্ধ অবস্থায় গৃহবধূ যখন ছটফট করছেন, তখন স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি তাঁকে একটি ঘরে ফেলে রেখে বেরিয়ে যায় বলেও অভিযোগ। নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার মনোহরপুরে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলকোট থানার মনোহরপুরের বাসিন্দা আলেম শেখ তাঁর স্ত্রী রূপসুনা বেগমের উপর অ্যাসিড হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় আলম শেখের বাবা, মাও জড়িত বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আলেম শেখকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বাবা, মা পলাতক। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে মনোহরপুর থানার পুলিশ। অন্যদিকে, গুরুতর জখম অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রূপসুনা বেগম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ১৩ আগে মনোহরপুরের বাসিন্দা আলেম শেখের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামের রূপসুনা বেগমের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকেই আলেম শেখ ও তাঁর পরিবার নানান অছিলায় রূপসুনাকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার দাবি জানায় বলে অভিযোগ। এটা নিয়ে প্রায়ই অশান্তি হত।
তারপর গত ৬ মাস আগে স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন ওই গৃহবধূ। এরপর থেকেই ২ সন্তানের কথা ভেবে স্বামীর ওই সম্পর্কের প্রতিবাদ করেন তিনি। তারপর শনিবার তিনি প্রতিবাদ জানালে অশান্তি চরমে ওঠে।
অ্যাসিড আক্রান্ত রূপসুনা বেগমের দিদি মোমেরা বেগম জানান, শনিবার রাতে স্বামীকে ওই মহিলার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখে প্রতিবাদ করেন রূপসুনা। তখনই তাঁকে মারধর করা হয় এবং গায়ে অ্যাসিড ঢেলে দেয় বলে অভিযোগ। এমনকি অ্যাসিডদগ্ধ অবস্থাতেই গৃহবধূকে একটি ঘরে ফেলে রেখে তাঁর স্বামী,শ্বশুর ও শাশুড়ি বেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এরপর প্রতিবেশীর থেকে খবর পেয়ে তাঁরা শেখ আলমের বাড়িতে যান এবং রূপসুনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মেয়ের উপর অ্যাসিড হামলা হয়েছে বলে থানায় জামাই ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন রূপসুনার বাবা মহব্বৎ শেখ। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রূপসুনার গায়ে অ্যাসিড ঢালার পর তাঁকে একটি ঘরে ফেলে রাখা হয়। তাঁদের ফোন করতেও দেওয়া হয়নি। প্রতিবেশীরা ফোন করে তাঁদের খবরটি জানান। তারপর তাঁরা সেখানে গিয়ে গুরুতর জখম রূপসুনাকে উদ্ধার করে প্রথমে মঙ্গলকোট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ঘটনায় জামাই ও তাঁর পরিবারের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মহব্বৎ শেখ। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই শেখ আলেমকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে আলমের বাবা, মা পলাতক। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে বলে মনোহরপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে।