মালবাজার: দুর্গাপুজোর বিসর্জন দেখতে গিয়ে জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারে হড়পা বানে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর পরই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের ভূমিকা। মালবাজারের হড়পা বান কী ম্য়ানমেড? নদীতে বোল্ডার ফেলা কি কাল হল এ ক্ষেত্রে। দুর্ঘটনার পর এসব বিষয়গুলি মাথা চাড়া দিচ্ছে।
দুপাশে চড়, মাঝখানে জলের ধারা। এ ভাবেই বয়ে চলেছে মাল নদী। মালবাজার এলাকার অধিকাংশ মাটির প্রতিমার বিসর্জন হয় এই নদীতে। সেখানেই শুকনো খাতে পাথরের বোল্ডার দেওয়া হয়েছিল। অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল মাল নদীবঙ্গে। এক দিকের জল অন্য দিকে গিয়ে যাতে জলস্তর বাড়ে সে জন্যই এ রকম করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সুবিধার্থেই এই কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু নদীর গতিপথ আটকানোর এই প্রচেষ্টা কী কাল হল?
নদী গতিপথ নিয়ন্ত্রণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাবধানতার সঙ্গে না করলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে যায়। এ নিয়ে এক নদী বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “কোথায় বাঁধ দেওয়া হল, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাঁধ দেওয়ার আগে পরিবেশের সমীক্ষা ভালভাবে করা জরুরি। সমীক্ষায় গণ্ডগোল হলে তার পরিণামও মারাত্ম হতে পারে।”
বাঁধ তৈরি করে বিসর্জনই ‘রীতি’
প্রতি বছর এভাবেই বিসর্জন হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, “প্রতিবারই আমরা এ ভাবে বানাই। ছটপুজো এবং বিসর্জনে এ রকম করা হয়। কোনও বার সমস্যা হয়নি।” উদয়ন গুহ বলেছেন, “হড়পা বানের ব্যাপারে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। এমন অনেক নদী আছে উত্তরবঙ্গে যেখানে কখনও হড়পা বান হয়নি। আবার অনেক নদীকে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার হয়েছে। তাই আগে থেকে সচেতন করা মুশকিল।” ফিরহাদ হাকিম এই দুর্ঘটনার জন্য জনসমাগমকেই দায়ী করেছেন। বাঁধ না দিলে মালনদীতে বিসর্জনই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ফিরহাদ এ ব্যাপারে বলেছেন, “ওখানে পাথর না দিলে বিসর্জনই সম্ভব নয়। ওখানে যা জলের স্তর তাতে তো প্রতিমা ঢুববে না।”
বাঁধ দিয়ে বিসর্জন বছরের পর বছর হয়ে আসলেও, মালনদীতে হড়পা বান আগে কখনও হয়নি এমনটাও নয়। পাহাড়ি এলাকা দিয়ে বয়ে এসেছে মাল নদী। উঁচু থেকে নীচে নেমেছে তা। তাই যখন জলের ধারা নেমে আসে, তখন হুড়মুড়িয়ে তা নীচে নামে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতো বৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে। তাহলে জল নামার সম্ভবনার কথা কী জানা ছিল না প্রশাসনের? তাহলে কেন সতর্ক হওয়া গেল না?
নদীপথে বাঁধ দেওয়ার বেশ কিছু বিজ্ঞানসম্মত কারণ থাকে। সেই সব সতর্কতা বাঁধ তৈরির সময় বিবেচিত হয়েছিল? বিষয়টি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বিশেষজ্ঞ প্রদীপ্ত ঘোষাল বলেছেন, “ওখানে বোল্ডার দিয়ে বাঁধ তৈরি হয়েছিল। বাঁধের এক পাশ দিয়ে জল যাবে, সেখানে বিসর্জন হবে। এটাই পরিকল্পনা ছিল। এটা মিথ্যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু জল যখন আসে। বৃষ্টি যখন হয়, তখন এই নদী গুলির পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়, তা কিন্তু জানা কথা। কিন্তু তবুও প্রচুর মানুষ জড়ো হল। প্রশাসন বাধাও দেয়নি। দুর্ঘটনা ঘটল।”