জলপাইগুড়ি: ২০ পর এবার ১৯! এবার ১৯ নম্বর সেকশনেও ভালুকের পায়ের ছাপ মিলল। রাতভর তল্লাশিতে ২০ সনম্বর সেকশনে ভালুকের খোঁজ মেলেনি। এবার ১৯ নং সেকশনে পায়ের ছাপকে ঘিরে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াল জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে। ভালুকের খোঁজে এবার আকাশ পথে ড্রোন দিয়ে তল্লাশি শুরু করল বনদফতর।
মঙ্গলবার সকালে ১৯ নম্বর সেকশনে এক প্রাণীর পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। এদিকে ভালুকের খোঁজে সোমবার রাতভর ২০ নম্বর সেকশনে তল্লাশি চালিয়েছেন বনকর্মীরা। এবার এই পায়ের ছাপকে ঘিরে নতুন করে ভালুকের আতঙ্ক ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে। তবে এটা ভালুকের পায়ের ছাপ কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
গতকাল সন্ধ্যার মুখে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের ৪ জন চৌকিদার এক সঙ্গে কাজে যোগ দিতে আসছিল। সেই সময় তারা চা বাগানের ২০ নং সেকশনে পিচ রাস্তার ওপর একটি কালো লোমশ প্রাণীকে দেখতে পায়। তাদের সন্দেহ সেটি ভাল্লুক।
এরপর তারা বিষয়টি চা বাগান কর্তৃপক্ষকে জানায়। বাগান কর্তৃপক্ষ বনদফতরকে খবর দিলে রাতেই এলাকায় এসে পৌঁছয় বনদফতরের কর্মীরা। খবর পেয়ে আসে পুলিশ ও পরিবেশ কর্মীরা। রাতেই তাঁরা চা বাগানের ২০ নং সেকশন জুড়ে তল্লাশি চালান। কিন্তু তাঁরা ভাল্লুকের দেখা পাননি।
মঙ্গলবার ভোর থেকে নতুন করে ভাল্লুকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এবার ভালুক খুঁজতে ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এরপর চা বাগানের ১৯ নং সেকশনে নতুন করে তল্লাশি শুরু করেন বনকর্মীরা। সেখানে চা গাছের ঝোপের কাছে অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমি পৌনে ছটার সময়ে এদিকে আসছিলাম। এখানে একটা কালো মতো কিছু একটা জঙ্গলের মধ্যে চলে যেতে দেখা গেল। আমরা দূর থেকে ওতটা বুঝতে পারিনি। আবার ঘুরে জন্তুটা এদিকেই চলে এল। দেখে আমার ভালুকই মনে হয়েছে। আমরাই সাইকেল ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।”
বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “খবর আছে চার জন কর্মী এখানে ভালুক দেখেছেন। যেহেতু চার জন শ্রমিক দেখেছেন, তাই ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তাই আমরা তল্লাশি চালাচ্ছি। তবে একটাই অনুরোধ কোনও শ্রমিক যেন বন্য প্রাণীর কোনওরকম ক্ষতি না করেন।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মালবাজারের গুডহোপ চা বাগানেও ভালুকের আতঙ্ক ছড়ায়। মাল স্কোয়াড এলাকা পাহারা দেয়। কুনকি হাতির সাহায্যে ভালুকটি খোঁজা হয়। বাগানের শ্রমিকরাই প্রথমে ভালুকটিকে দেখতে পান। পরে তাঁরা খবর দেন বন দফতরে।
নভেম্বরের শেষের দিকেই ডুয়ার্সের লোকালয়ে ভালুক ঢুকে পড়ে। ভগৎপুর চা বাগানে ভালুক ভয়ে হুলুস্থুল শুরু হয়।
গত শনিবারই ভালুকের হামলায় মৃত্যু হয় এক কিশোরের। তার পর সেই ভালুককেও পিটিয়ে মেরে ফেলে স্থানীয়রা। শনিবার ফের চা-বাগান এলাকায় ভালুক দেখে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। জানা যায়, চা-বাগানে কাজ করতে গিয়ে ভালুক দেখেন কয়েকজন। তাঁদের তেড়ে আসে ভালুকটি।
এর পর ভালুক ধরতে প্রথমে আসরে নামেন জলপাইগুড়ি ও গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনকর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ ও বনকর্মীদের। তার পর দিনভর চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয় ভালুকটি। শনিবার মেটেলি চা বাগানের পর জগতপুর চা বাগানে ফের ভালুকের দেখা পাওয়া যায়। স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা বাড়ে বনকর্মীদের। কারণ কয়েক দিন আগের মেটলির ঘটনা রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছিল কর্মীদের মধ্যে। এবার যাতে ভালুক কাউকে আক্রমণ না করে, আবার কোনও ভাবে তাকে যাতে পিটিয়ে হত্যা করতে না পারে গ্রামবাসীরা, তার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত ছিল বনকর্মীরা। এক্ষেত্রেও সেটি করা হয়েছে।