জলপাইগুড়ি: পরণে পরিপাটি পোশাক। রাস্তার ধারে অনেকক্ষণ ধরেই বসেছিলেন এক মহিলা। এলাকার লোকজনের নজরে পড়লেও তারা খুব একটা মাথা ঘামাননি। আচমকাই দেখা যায় ওই মহিলা রাস্তার ধারে এগিয়ে আসেন। রাস্তা দিয়ে সে সময় ছুটে যাচ্ছিল একের পর এক লরি। দুই লরির মাঝে হঠাৎই ওই মহিলা ঝাঁপ মারতে যান বলে অভিযোগ। প্রথমবার ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বারও সেই একই চেষ্টা করেন। তখন ওই রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন সদর ট্রাফিক পুলিশের ওসি বাপ্পা সাহা। তিনি কার্যত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করেন ওই মহিলাকে। রবিবার দুপুরে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত অসম মোড়ে এই ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। ওই মহিলাকে উদ্ধার করে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করছে পুলিশ।
এদিন দুপুরে জাতীয় সড়কে টিম নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন সদর ট্রাফিক পুলিশের ওসি বাপ্পা সাহা। আচমকাই তিনি লক্ষ্য করেন, রাস্তা ধরে প্রবল গতিতে ছুটে চলা লরিগুলির মাঝে এক মহিলা ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একটি লরির চালক ওই মহিলাকে দেখে গতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলায় বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান। এরপর আরও একটি গাড়ির সামনে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই মহিলা। সেই সময়ই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ওসি ট্রাফিক বাপ্পা সাহা। ওই মহিলাকে আটকাতে রীতিমত ওসি নিজেই গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
কোনওমতে ওই মহিলাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার ধারে নিয়ে যান। ওই পুলিশ আধিকারিকও বরাত জোরে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পান এদিন। এরপর ওই মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তি সরকার নামে ওই মহিলা পুলিশকে জানান, পারিবারিক অশান্তির জেরে তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিলেন। ভক্তি সরকারের বাড়ি কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত অসম মোড় তারাপাড়া এলাকায়। ঘটনায় ডিএসপি হেড কোয়ার্টার সমীর পাল জানান, বাপ্পা সাহা যা করেছেন তা প্রশংসনীয়। একইসঙ্গে ভক্তি সরকারের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিষয় খতিয়ে জানতে পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে চলেছে পুলিশ।
ভক্তি সরকার বলেন, “গাড়ির তলায় ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলাম। বাড়িতে প্রায়ই অশান্তি হয়। বর, ননদ, ননদের বররা অকারণে ঝামেলা করে। খালি আমাকে মরতে বলে। তাই ভেবেছিলাম মরে যাব। পুলিশ দাদা গিয়ে ধরে ফেলল। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মাঝে মধ্যেই বর, ননদরা মারতে আসে। আজও এসেছিল। এরপরই আজ সকাল সাড়ে ৮টা ৯টা নাগাদ আমি বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে। অসম মোড় ছাড়িয়ে বসেছিলাম রাস্তার ধারে।”
একেবারে শান্ত গলা ভক্তির। শীর্ণ চেহারা, ফিনফিনে গলা। কালো চুলের আড়ালে পাক ধরেছে বেশ কয়েকটিকে। সিঁথি ভরা সিঁদুর পরেন স্বামীর নামে। সেই স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মানসিক অশান্তিতে আছেন বলেও জানান ভক্তি সরকার। তাঁর কথায়, “শান্তিতেই তো থাকতে চাই বাড়িতে। কিন্তু শান্তি আর হচ্ছে কই! পুলিশকে সবটাই বললাম। পুলিশ বলছে, বাঁচতে হবে।”
ডিএসপি সমীর পাল বলেন, “তারাপাড়ার বাসিন্দা ভক্তি সরকারের ৩৮ বছর বয়স। আজ বেলা ১টা নাগাদ জাতীয় সড়কের ধারে চলে যান। সেখানে গাড়ির তলায় ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওনার বোধহয় কোনও হতাশা বা পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। আমাদের ট্রাফিক টিম ওনাকে উদ্ধার করেছে। আমাদের সাব ইন্সপেক্টর ওসি বাপ্পা ওনাকে উদ্ধার করেন। আমি নিজে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলব। কাউন্সিলিংয়ের দরকার হলে তাও করা হবে।”