জলপাইগুড়ি: এক মাসের বেশি সময় ধরে একটি হাতি অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছে জঙ্গলে। কখনও গাছের ওপরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনও শুঁড়ের ওপর ভর দিয়ে রয়েছে। এক মাসে মাত্র দু’বার চিকিৎসা হয়েছে। গ্রামবাসীরাই খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু অভিযোগ, নির্বিকার বনদফতর। এমনকি এগিয়ে আসেনি কোনও পশুপ্রেমী সংগঠনও। নাগরাকাটার অসুস্থ হাতিটি অসহায় অবস্থায় নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দিনের পর দিন। সারাদিন হাতিটি গাছে শরীর হেলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে। হাতিটির শরীরের পেছনের অংশের ক্ষতস্থানে পোকা ধরে গিয়েছে, তা থেকে পচন শুরু হয়েছে।
এরই সঙ্গে ডান দিকের পিছনের পায়ের আঘাতও গুরুতর আকার ধারণ করায় হাতিটি একপ্রকার নড়াচড়া করতে পারছে না। রবিবার রাত থেকে হাতিটি নদী সংলগ্ন জঙ্গলে দাঁড়িয়ে ছিল। হেঁটে নদী পর্যন্ত আসতে না পারায় জল খেতে পারছিল না। এদিন দুপুরে হাতিটি নদীর পাশে এসে পৌঁছালেও, বিকালে শুঁড়ে ভর করে বহু কষ্টে হাতিটি নদীতে নেমে জল খেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এদিন দুপুর নাগাদ বনদফতরের একজন চিকিৎসক হাতিটিকে দেখতে এসেছিলেন, তিনি কাছ থেকে কিছুক্ষণ হাতিটিকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং কিছু ছবি তুলে নিয়ে যান । খেরকাটা, ধূমপাড়া ও কলাবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাই যতটুকু সম্ভব হাতিটিকে খাবারের জোগান দিয়ে চলেছেন। তবে একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতির জন্য তা অপর্যাপ্ত। এদিনও তাঁরা বাঁধাকপি, লাউ, আটা ও কলাগাছ হাতিটিকে খেতে দিলেও – হাতিটি কাঁচা সবজি খাচ্ছে না, অল্প পরিমাণ কলাগাছ ও কয়েক কেজি আটা কেবল খেয়েছে। বিকালে হাতিটি নদীতে নেমে জল খাওয়ার পাশাপাশি দেহের ক্ষতস্থানে জল ছেটানোর চেষ্টা করতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এরপর বেশ কিছুক্ষণ হাতিটির গায়ে জল ছিটিয়ে দেয়, সেই সময় হাতিটি চুপচাপ নদীতে দাঁড়িয়েছিল। লেজ সরিয়ে ক্ষতস্থানে জল লাগানোর চেষ্টা করছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদেরই বক্তব্য, জল ছেটানো বন্ধ করলেই হাতিটি ল্যাজ দিয়ে ক্ষতস্থানে আঘাত করে আবারও জল ছেটানোর ইশারা করছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “হয়তো বড় জ্বালা করছিল। জল লাগলে আরাম পাচ্ছিল। তাই এভাবেই অনেকক্ষণ জল দিই আমরা।” হাতিটির যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা হয়, তার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারাও। রাজ্যে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “২ বছর ধরে অসুস্থ অবস্থায় ঘোরাফেরা করছিল হাতিটি। জঙ্গলের মধ্যে ওকে লোকেট করা যায়নি। আমি আজই খবর পেলাম। বনদফতরের কর্মীরা হাতিটির চিকিৎসা করছেন। আমি খবর নিচ্ছি।”