জলপাইগুড়ি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়েই বিভ্রাট। তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত এক প্রতিবন্ধী মহিলার অভিযোগ, তাঁর নামে বরাদ্দ হওয়া টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে না ঢুকে অন্য কারও কাছে চলে যাচ্ছে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি পাহাড় পুর গ্রামপঞ্চায়েতে। ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও কোনও লাভ না হওয়ায় এবার সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের মুখ থেকে পুরো ঘটনা শুনে তৃণমূল উপ প্রধান মন্তব্য করেন, ‘মহিলার মানসিক বিকৃতি আছে।’
জলপাইগুড়ি পাহাড় পুর গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দা বুলু দেবনাথ। তিনি ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী দেবনাথ উভয়েই প্রতিবন্ধী। জানা গিয়েছে, দুয়ারে সরকার প্রকল্প যখন শুরু হয় সেই সময় জয়ন্তী দেবনাথ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করেন। এরপর থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না জানতে তাঁর মেয়েকে দিয়ে প্রায়শই মোবাইলের মেসেজ দেখতে বলতেন। কিন্তু অন্যরা টাকা পেলেও তিনি টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। আর এতেই হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দফায় পঞ্চায়েতের কাছে যান। কিন্তু পঞ্চায়েত তাঁদের পাত্তা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
জয়ন্তী দেবনাথ অভিযোগ করে বলেন, “আমি বিডিও অফিসে গেলে জানতে পারি, আমার টাকা অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। আমার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট অথচ যিনি টাকা পাচ্ছেন তাঁর স্টেট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমার সন্দেহ এর মধ্যে বড় কোনও দুর্নীতি রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেও তৃণমূল করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের জন্য এত কিছু করছেন কিন্তু মাঝখানে পঞ্চায়েত আর কিছু মানুষের জন্য আমি লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছি না।”
স্বামী বুলু দেবনাথ বলেন, “আমার স্ত্রীর কাছ থেকে কাগজ নিয়ে পঞ্চায়েত কাগজ আটকে রেখেছিল। এখন দেখতে পাচ্ছি ওরা নিজেদের লোকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দিয়ে দিয়েছে। আমাদের গ্রামে শুধু আমরাই নই, আরও অনেকেই এই দুর্নীতির শিকার হয়েছে। তারাও টাকা পাচ্ছে না।” পেশায় ফেরিওয়ালা বুলু জানান, বাসে বাসে সলটেড বাদাম বিক্রি করেন তিনি। তিনি দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী। এই পঞ্চায়েতকে জেতানোর তিনি ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই ভোটে প্রচুর খেটেছেন বলেও দাবি করেন বুলু।
ঘটনায় পাহাড় পুর গ্রামপঞ্চায়েতে উপ প্রধান বেনুরঞ্জন সরকার বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে যিনি ফর্ম ফিলাপ করেন, তিনি যে অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন সেই অ্যাকাউন্টই টাকা ঢোকে।” এই ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা তদন্ত না করে বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। পরে তিনি বলেন, “যিনি আপনাদের কাছে এই অভিযোগ করেছেন, তাঁর মানসিক বিকৃতি আছে। তিনি সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা পান, কিন্তু তিনি বলে বেড়ান কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পাননি।”