জলপাইগুড়ি: একদিকে যখন বাংলায় কোভিডের গ্রাফ আবারও উপরের দিকে উঠছে। তখন নতুন আতঙ্কের নাম অজানা জ্বর (High Fever)। এই জ্বরেই কাঁপছে জলপাইগুড়ি। হু হু করে শিশুর জ্বর বাড়ছে, সঙ্গে সর্দি-কাশি তো রয়েছেই, এমনকী খিচুনি পর্যন্ত হচ্ছে। কোভিড (COVID-19) পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে ৯০ শতাংশের বেশি নেগেটিভ। অথচ রোজই জলপাইগুড়ির হাসপাতালগুলিতে বাচ্চাদের নিয়ে মায়েদের লম্বা লাইন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই জ্বর জাপানি এনকেফেলাইটিস হতে পারে। এবার নমুনা কলকাতায় পাঠানোর তোড়জোর শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন ব্লকে গত এক সপ্তাহ ধরে শিশুদের মধ্যে এই জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। শতাধিক শিশু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ধুম জ্বর উঠে পড়ছে তাদের। প্রায় সংজ্ঞাহীনের মতো পড়ে রয়েছে তারা। জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও এই উপসর্গের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শিশু হাসপাতালের উপরও রোগীর চাপ বাড়ছে। এই উপসর্গগুলিকে এতদিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ বলে ধারনা ছিল স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের।
সংবাদমাধ্যমে শিশুদের জ্বরে আক্রান্তের খবর ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়িতে যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচজন চিকিৎসকের এক বিশেষজ্ঞ টিম।
জলপাইগুড়ি পৌঁছবার পর এই বিশেষজ্ঞরা উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি চিকিৎসক সুশান্ত রায়-সহ জলপাইগুড়ি জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। এরপর তাঁরা যান জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে। চিকিৎসাধীন শিশুদের দীর্ঘক্ষণ ধরে তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন। এরপর বাচ্চাদের মা, পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলে বাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ কেমন তা বোঝার চেষ্টা করেন।
এই বিশেষজ্ঞ দলে রয়েছেন চিকিৎসক শান্তনু হাজরা। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শান্তনু হাজরা বলেন, “আমরা শিশুদের দেখলাম। তাদের বাড়ির আশেপাশে তথ্য থেকে জানতে পারলাম, সেখানে এরকম জ্বর বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে। আমাদের প্রাথমিক ধারনা, জাপানি এনকেফেলাইটিস সংক্রমণ হতে পারে। নিশ্চিত হতে যাবতীয় নমুনা কলকাতায় পাঠাবার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।”
তবে এই দলেরই অপর সদস্য চিকিৎসক গৌতম দাসের অবশ্য বক্তব্য, “প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। তবে গত কয়েক বছর আগে এই সময় জলপাইগুড়িতে ব্যাপক ভাবে এনকেফেলাইটিস সংক্রমণ হয়েছিল। তাই সেটিও আমাদের ভুললে চলবে না।” তবে সন্দেহের তালিকায় শুধু এনকেফেলাইটিসই নয়, রয়েছে স্ক্রাব টাইফাস, চিকুন গুনিয়া, ডেঙ্গুর মতো কারণও। সংক্রমণের সঠিক কারণ জানতে শিশুদের রক্তের নমুনা ও নাজাল সোয়াব (Nasal Swab) কলকাতায় পাঠাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০৫০ আসতে ঢের দেরি, তবে এখনই দুয়ারে ‘ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি’!