
জলপাইগুড়ি: আজ থেকে প্রায় ৯ মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই ঘটনাকে নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জলপাইগুড়ি শহরের ১৫৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী স্কুল ‘জলপাইগুড়ি সুনীতিবালা সদর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাসকে রীতিমতো ধমক দিয়ে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সৈকত চট্টোপাধ্য়ায়ের পা ধরছেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা অরুনিমা মৈত্র। আর সেই ভিডিয়োটিই তাঁর এক্স হ্যান্ডেল থেকে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিরোধী দলনেতার তরফে টুইট করা ওই ভিডিয়ো মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এটি ফেক ভিডিয়ো বলে দাবি করেছেন সৈকত চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতার দাবি, এটি এ আই প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর সৈকত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি দাবি করেন, দল তাঁকে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। এরমধ্যেই শপথ গ্রহণ হবে। আর তার আগে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল নেতার বক্তব্য, তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিলে ২৬-এর নির্বাচনে জলপাইগুড়ি আসন দখলে করতে পারবে না বিজেপি। তাই এই মরিয়া চেষ্টা। একইসঙ্গে ওই নেতা আরও দাবি করেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়ে স্কুলের প্রায় সমস্ত শিক্ষিকা তাঁকে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলেও দাবি নেতার। তিনি আরও জানান, আরজি কর কাণ্ডের পর আন্দোলন করতে না দেওয়ায় তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয় ওই প্রধান শিক্ষিকার। এই বিষয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস সাফ জানান, এটা থ্রেট কালচার। স্কুল সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়াতেই সৈকত চট্টোপাধ্য়ায় তাঁকে কান ধরে ওঠবোস করান বলে অভিযোগ শিক্ষিকার। বিষয়টি তিনি শিক্ষা দফতরের সব আধিকারিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি ও সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেন। কিন্তু ৯ মাস পার হয়ে গেলেও এখনও কোনও সুরাহা না হওয়ায় তিনি উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়েছেন। আদালতে সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষিকা বলেন, “আদালত নিশ্চয়ই ভিডিয়োটি ফরেনসিক তদন্ত করতে দেবে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী কীভাবে এই ভিডিয়ো পেলেন, তা জানা নেই।”
সহকারী প্রধান শিক্ষিকা অরুনিমা মৈত্রকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনার পর তিনি তিনবার পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। পাশাপাশি আইনের সাহায্য নিয়েছেন তিনি। তাই এর বেশি তিনি কিছু বলবেন না।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি বুবাই করের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী জেনে-বুঝেই এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছেন। তাই আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন। সৈকত চট্টোপাধ্যায় আগেও এই জাতীয় কাজ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। পি ডি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এসএফআই জয়ী হওয়ায় তৎকালীন প্রিন্সিপালের সঙ্গে সৈকত খারাপ ভাষায় কথা বলেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে মহিলাদের সামাজিক সুরক্ষা তলানিতে তা সর্বজনবিদিত, বিশেষত কর্মরত মহিলারা কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন, অনেকাংশে তৃণমূল নেতাদের দ্বারা, সেটাও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অজানা নয়।
যেমন এই ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে, জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর গার্লস… pic.twitter.com/SGcRxzRRI3— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) November 10, 2025