Malbazar Flash Flood: মেয়ে হারা মামির কাছে ভাগ্নিই ছিল সব, হড়পার জলে সলিল সমাধি দু’জনেরই

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Oct 07, 2022 | 7:10 PM

Jalpaiguri News: বৃহস্পতিবার একাদশীর দিন জলপাইগুড়ির মর্গে তাদের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপরই দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।

Malbazar Flash Flood: মেয়ে হারা মামির কাছে ভাগ্নিই ছিল সব, হড়পার জলে সলিল সমাধি দুজনেরই
হড়পা বানে মৃত্য়ু মামি ভাগ্নির।

Follow Us

জলপাইগুড়ি: পুজোর ভাসান দেখতে মাল নদীর ধারে গিয়েছিল ছোট্ট ঊর্মি। মা, বাবা, মামি, দিদা ছিল সঙ্গে। বাড়ির অন্যরা তখন টেলিভিশনে ভাসানের ছবি দেখছে। হঠাৎই টিভির পর্দায় ‘ব্রেকিং নিউজ’। হড়পা বান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ৮ জনকে। এর মধ্যে একজন বাচ্চাও আছে। এরপরই বাড়িতে ফোন, ঊর্মিও ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে, সঙ্গে ওর মামি। ঘটনার দু’দিন পরও বাড়ির লোকজন বেবাক। ফ্রক পরা ছোট্ট ঊর্মির দেহ যখন পাড়ে ফিরিয়ে আনা হয়, চোখের জল রুখতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ কেমন বিচার হল ভাগ্যের?। উমা গেল, সঙ্গে ছোট্ট দুগ্গাটাকেও নিয়ে গেল?

দশমীর সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের মাল নদীর ধারে হড়পা বানে ভেসে যান অসংখ্য মানুষ। অধিকাংশকে উদ্ধার করা গেলেও ৮ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যেই ছিলেন রুমুর সাহা ও ঊর্মি সাহা। রুমুর ঊর্মির মামি। রুমুরেরও জীবন খুব যন্ত্রণার। রুমুর ও তাঁর স্বামী হেক্টর সাহার এক মেয়ে ছিল। সে মারা যাওয়ার সময় ময়নাগুড়ি কামারপাড়ার বাসিন্দা উত্তম সাহার মেয়ে ঊর্মির বয়স বছর দেড়েক হবে।

উত্তমের শ্বশুরবাড়ি মাল মহকুমার রাজাপাড়া এলাকায়। হেক্টর ও রুমুরের মেয়ে মারা যাওয়ার পর সন্তানহারা রুমুর ঊর্মিকে কন্যাস্নেহে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। রুমুরের কাছে ঊর্মি নিজের মেয়ে ছাড়া কিছুই ছিল না। এমনকী ময়নাগুড়ি থেকে ঊর্মিকে হেক্টর ও রুমুর মালে নিয়ে যান। ঊর্মি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এরপর থেকে মামাবাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করত ঊর্মি।

দশমীর দিন সেই ঊর্মিকে নিয়ে তার মামি, দিদা মাল নদীর ধারে ভাসান দেখতে যায়। গিয়েছিলেন ঊর্মির মা, বাবাও। এরপরই আচমকাই আসে হড়পা বান। তাতেই ভেসে গেল সাহা পরিবারের সমস্ত স্বপ্ন। এদিন হড়পা বান আসছে দেখে বাড়ির বাকিরা বিপদসীমা থেকে দূরে সরে গেলেও ততক্ষণে ঊর্মিকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যায় জলের তোড়। আর ঊর্মিকে ভেসে যেতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন মামি রুমুর। এরপরই ভেসে যান তিনিও। এরপর তাদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার একাদশীর দিন জলপাইগুড়ির মর্গে তাদের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপরই দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। রাতেই ঊর্মির দেহ এসে পৌঁছয় ময়নাগুড়িতে। ছোট্ট মেয়েটাকে এভাবে দেখে কান্না রুখতে পারেননি এলাকার লোকজন। পরে দেহ মালবাজারে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য হয়।

ঊর্মির জ্যেঠুর মেয়ে অন্তরা সাহা বলেন, “আমার খুড়তুতো বোন। কাল সন্ধ্যায় কাকা, কাকিমা, আমার বোন, ওর দিদা, মামি ঘাটে যায় বিসর্জন দেখতে। কাকা ব্রিজে দাঁড়িয়েছিলেন। বাকিরা নদীর একেবারে সামনে চলে যায় ভাসান দেখতে। হঠাৎই জল ধেয়ে আসে। বোন তলিয়ে যায়। ওকে বাঁচাতে গিয়ে ওর মামিও তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় বোনকে। আমাদের দেখানো হয়। মালবাজারেই ওর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। একটা বাচ্চা মেয়ের এমন পরিণতি স্বপ্নেও বাবা যায় না। যখন এই ঘটনা ঘটে আমরা বাড়িতে টিভিতে বসে দেখছিলাম সেই ঘটনা। তখনও ভাবতেই পারিনি আমার বোনটা ওখানে আছে, ওর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সাতজনের মধ্যে একটা বাচ্চাও আছে। পরে তো জানলাম।”

Next Article