ঝাড়গ্রাম: অতীত যেন ফের কড়া নাড়ছে জঙ্গলমহলের দরজায়। সেই সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা পোস্টার, নিরাপত্তার স্বার্থে জারি হওয়া হাই অ্যালার্ট, পুলিশের ছুটি বাতিল, সন্ধ্যের মধ্যেই নেতাদের জন্য ‘লক্ষণরেখা’ আর জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের ডাকা বন্ধে শুনশান রাস্তাঘাট। বাম জামানার শেষভাগের খন্ডচিত্র ফের স্পষ্ট হচ্ছে বেলপাহাড়ি সহ ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামগুলিতে। কারণ একের পর এক এলাকায় মিলছে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার। শনিবার ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া রামকৃষ্ণবাজার, রবিবার লোধাসুলি এলাকা, সোমবার একই ব্লকের আরও দুই জায়গার পর এবার মাওবাদী পোস্টার মিলল ঝাড়্গ্রাম জেলার বিনপুর থানার আশাকাঁথি মোড়ে। লাল কালিতে লেখা পোষ্টারটি একটি দেওয়ালে লাগানো ছিল। বাকি পোস্টারগুলির মতই বিনপুরেও ‘নিশানা’ তৃণমূলকেই।
বৃহস্পতিবার সকালে আশাকাঁথি মোড়ে পোস্টারটি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাতে এলাকার তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পোস্টারের দাবি, ‘যোগ্য লোকেদের প্যাকেজ না দিয়ে তা তৃণমূল নেতাদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এলাকার গরিব মানুষের টাকা লুণ্ঠনকারী হিসাবে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।’ অর্থাৎ জঙ্গলমহলের দরিদ্র মানুষের দুর্দশাকে ইস্যু করছে পোস্টারের লেখকরা।’ পাশাপাশি বিনপুরে উদ্ধার হওয়া কাগজে বিকাশ মাহাতো এবং চরণ মান্ডি নামে এলাকার দুই তৃণমূল নেতাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। মূলত এই শাসক শিবিরের এই দুই নেতাই মাওবাদীদের ডাকা বন্ধের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এদিকে, একের পর এক জায়গা থেকে মাওবাদীদের (Maoist) নাম করে ছড়িয়ে দেওয়া পোস্টারে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। প্রশাসনের তরফে একাধিকবার সেগুলিকে ভুয়ো বলা হলেও প্রতিদিন নতুন-নতুন জায়গা থেকে তা উদ্ধার হচ্ছে। তবে কি জঙ্গলমহলের জায়গায়-জায়গায় ফের গতিবিধি বাড়াচ্ছে মাওবাদীরা? চাপা স্বরে যেন প্রশ্ন সর্বত্র।
প্রসঙ্গত, একাধিক আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই কড়া অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে। রাজ্য পুলিশের ডিজি মালব্য নিজে জেলা সফর করে কথা বলেছেন সেখানকার পুলিশকর্তাদের সঙ্গে। পুলিশের ছুটি বাতিল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সন্ধ্যের মধ্যে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জায়গায় জায়গায় নাকা চেকিং এবং যৌথবাহিনীর অপারেশন চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই সবকিছুর মাঝেই রাতের অন্ধকারে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার ফেলে যাওয়ার ঘটনা হচ্ছে। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের খেলা হবে স্লোগানকেই সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে খেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।