
ঝাড়গ্রাম : আগামী ১৫ দিনের জন্য ইতিমধ্যেই হাই এলার্ট জারি করা হয়েছে জঙ্গলমহলের মাওবাদী অধ্যুষিত সমস্ত থানা এলাকায়। আগামী ১৫ দিনের জন্য সমস্ত পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যে পুলিশকর্মীরা ছুটিতে রয়েছেন, তাঁদের শুক্রবারই কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে তাদের কাছে রিপোর্ট এসেছে মাওবাদীরা জঙ্গলমহলের যে কোনও জায়গায় বড়সড় কোনও নাশকতা ঘটাতে পারে। সেই আশঙ্কায় শুক্রবার থেকেই জঙ্গলমহলের প্রতিটি থানা এলাকায় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এবার এই নিয়ে আরও সতর্ক পুলিশ। কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না পুলিশকর্মীরা। তাই এলাকার সব রাজনৈতিক নেতাদের সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ঘরে ফেরার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
গত ৮ এপ্রিল মাওবাদীরা বাংলা বনধের ডাক দিয়েছিল। বনধের সমর্থনে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টারও পড়েছিল জঙ্গলমহলে। আর মাওবাদীদের ডাকা ওই বনধে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল জঙ্গলমহল এলাকায়। রাস্তাঘাট শুনশান ছিল। দোকানপাট প্রায় বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়াও সেভাবে দেখা যায়নি। কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল জঙ্গলমহল। অতীতের সেই আতঙ্ক যেন আবার চেপে বসেছে জঙ্গলমহলের মধ্যে। আর এরপর থেকেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন শুরু করে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় নাকা তল্লাশি। রাজ্যের শাসক দলের অনেক নেতাই অবশ্য দাবি করেন জঙ্গলমহলে মাওবাদী বলে আর কিছু নেই। কিন্তু এই ঘন ঘন মাওবাদী পোস্টার এবং তারপর হাই এলার্টে চেনা আতঙ্ক ফিরছে জঙ্গলমহলে। আশঙ্কা জাগছে, তবে কি ফের মাওবাদীদের আনাগোনা বাড়ছে জঙ্গলমহলে?
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ করা রয়েছে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আনাগোনার বিষয়ে। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি এলাকায় ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে মাওবাদীরা রাতের অন্ধকারে আসা-যাওয়া করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিষয়টি অবগত করেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের জঙ্গলমহল এলাকার প্রতিটি থানায় হাই এলার্ট জারি করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের সন্ধে ছ’টার মধ্যে ঘরে ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সভা ও সমাবেশ সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে বলা হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি তথা বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা স্বীকার করে নিয়েছেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ এমনই এক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা সত্বেও দলের নেতা ও কর্মীরা সজাগ রয়েছে। তিনি বলেন, “মাওবাদীরা শান্ত জঙ্গলকে ফের অশান্ত করার চেষ্টা করলে জঙ্গলমহলের মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবেন।” এর পাশাপাশি জঙ্গলমহলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি শনিবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে এক বৈঠকও করবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।