Malda School: স্কুল না হানাবাড়ি? হাল ফিরবে কবে? অপেক্ষায় হরিশচন্দ্রপুরের শতাধিক পড়ুয়া
Bad Condition of School: স্কুলটি গ্রাম ছাড়িয়ে ৩০০ মিটার দূরে নির্জন এলাকায়। এদিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য নেই ঠিকঠাক কোনও পাকা রাস্তাও। দুই দিকে জমি, যেতে হয় মাঝের সরু আলপথ দিয়েই। ওই আলপথ দিয়েই কোনওমতে আনা হয় মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কবে পাকা কোনও রান্নাঘরও নেই। একটা নলকূপ রয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে বের হয় বের হয় আয়রনযুক্ত নোংরা জল।

মালদহ: চরম দুরাবস্থা স্কুলের। নেই গেট, নেই রান্নাঘর, শৌচাগার। শৌচকর্ম সারতে ঝোপের ধারে যেতে হয় শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়াদের। পানীয় জলের অভাবও তীব্র। অভিযোগ, বেহাল সেই স্কুলেই নিত্য বসে মদের আসর। আড্ডা জমায় সমাজ বিরোধীরা। নিরাপত্তাহীনতাকে সঙ্গী করে স্কুলে আসছেন খোদ প্রধান শিক্ষিকা। অবস্থা যা, তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন হানা বাড়ির থেকে অবস্থা খারাপ হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেষ্টপাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের। অভিযোগ থানা থেকে বিডিও অফিস, শিক্ষা দফতর সর্বত্র ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি।
স্কুলটি গ্রাম ছাড়িয়ে ৩০০ মিটার দূরে নির্জন এলাকায়। এদিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য নেই ঠিকঠাক কোনও পাকা রাস্তাও। দুই দিকে জমি, যেতে হয় মাঝের সরু আলপথ দিয়েই। ওই আলপথ দিয়েই কোনওমতে আনা হয় মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবে পাকা কোনও রান্নাঘরও নেই। একটা নলকূপ রয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে বের হয় আয়রনযুক্ত নোংরা জল। সেই জল দিয়েই বাধ্য হয়ে করতে হয় মিড ডে মিলের রান্না।
নেই বিদ্যুৎও। গোটা স্কুল পাঁচিলে ঘেরা থাকলেও নেই কোনও গেট। তবে গেট যে ছিল না এমনটা নয়। ছিল, সেটাও চুরি হয়ে গিয়েছে। স্কুলে ঢুকলেই দেখা যাবে চুতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল। এখানে যে রোজকার সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসে তা ভালই জানেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্কুলের পথচলা শুরু ২০০৩ সালে। প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত খাতায়-কলমে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৪। কিন্তু দুঃসময়েও এখনও স্কুলে আসে ২০ থেকে ২৫ জন। কখনও কখনও সংখ্যাটা আরও কমে যায়। রয়েছেন ৪ জন শিক্ষিকা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাকিলা বানু বলছেন, স্কুলের সমস্যা নিয়ে বহুবার তিনি ব্লক প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা দফতর, পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে হতে হয়েছে হতাশ। অভিযোগ, কমেনি সমাজবিরোধীদের দাপাদাপি। ফেরেনি স্কুলের হাল। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুলের শিক্ষিকা সকলেই একযোগে বলছেন এই দুরাবস্থা দেখার পরে এখন দেখার কবে ফেরে স্কুলের হাল।
এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাজমুল হোসেন যদিও জানাচ্ছেন আগে তিনি পুরো বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। তারপর পুরোটা খতিয়ে দেখবেন। অন্যদিকে মালদার ডিআই মলয় মণ্ডল বলছেন, “আমি খোঁজখবর করছি। আসলে এই ধরনের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলির অথরিটি পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দফতরের কাছে থাকে। তাও যেহেতু পড়াশোনার ব্যাপার জড়িয়ে আছে, তাই আমাদের তো দেখতে হয়। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।”
চাপানউতোর চলছে রাজনৈতিক মহলেও। মালদহের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে উন্নয়ন নিয়ে খোঁচা দিচ্ছেন। বলছেন, “সাধারণ মানুষ যাতে শিক্ষার আলোয় না আসতে পারে তার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলি ২০১১ সালের পর থেকেই বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। উল্টে দুষ্কৃতীরাজ বহাল রাখতে দেদার মদের দোকান খুলে দিয়েছে। আমরা এর ধিক্কার জানাই। পশ্চিমবঙ্গের কোনও জায়গায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ রাখেনি এই তৃণমূল সরকার।”
পাল্টা তৃণমূলের মালদহের জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, “এই স্কুলের সমস্যা নিশ্চয়ই প্রশাসন দেখবে। মন্ত্রী আছেন। তিনি অবশ্যই দেখবেন। কিন্তু বিজেপির কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা, রাজনীতি করা। করলে গঠনমূলক সমালোচনা করুন। রাজনীতি করবেন না।”
