মালদহ : পা বেঁধে মাথা নীচের দিকে করে ঝুলিয়ে চার বছরের শিশুর ওপর চলছে অকথ্য অত্যাচার। বাড়িতে ছিলেন না শিশুর বাবা ও মা। ফাঁকা বাড়িতে পরিচিত দুই যুবক মিলেই এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটছিল বলে জানতে পেরেছে শিশুর পরিবার। এরপরই অভিযোগ দায়ের করা হয়। শিশুর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভয়ে এখনও সিঁটিয়ে রয়েছে সে। কার্যত কথাই বলতে পারছে না ওই শিশু। মালদহের বাসিন্দা ওই পরিবার কাজের খোঁজে হায়দরাবাদে গিয়েছিল। আর সেখানেই এই ঘটনা ঘটেছে। নিছক মজা করার জন্যই শিশুকে এ ভাবে মারা হত বলে জানা গিয়েছে।
মালদহের বামনগোলা থানার খুটাদহ গ্রামের বাদিন্দা পূর্ণ সরকার পেশায় রাজমিস্ত্রী। কাজ করতে সম্প্রতি তিনি যান হায়দরাবাদে। তাঁর স্ত্রীও হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। ভাড়া নেওয়া একটি ফ্ল্যাটে চার বছরের সন্তানকে কখনও রেখে যান তাঁরা। আবার কখনও সঙ্গে নিয়ে যান। তবে তাঁদের অনুপস্থিতিতে যে এমন ঘটনা ঘটছে, তা আঁচ করতে পারেননি শিশুর বাবা-মা।
ওই বাড়িতেই পাশের ঘরে থাকতেন একই গ্রামের এক যুবক প্রসেনজিৎ মণ্ডল ও তাঁর এক সঙ্গী। তাঁরাও কাজের সন্ধানেই এসেছিলেন হায়দরাবাদে। ফোনে ওই শিশুর বাবা পূর্ণ সরকার টিভি-৯ বাংলাকে জানিয়েছেন, কখনও কখনও ওই দুই যুবকের ভরসায় চার বছরের শিশু সন্তানকে রেখে যেতেন তাঁরা। কিছুদিন পরে হঠাৎ দেখেন শিশুর মাথায় ও হাতে- পায়ে গভীর চোট শিশুর। সে কিছু বলতেও পারছে না। ট্রমার মধ্যে রয়েছে। পরে একটি ভিডিয়ো ফুটেজ হাতে আসে তাঁর। সেখানেই দেখা যায় ওই দুই যুবক অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে শিশুর ওপর। শুধুমাত্র মজা করতেই এ ভাবে ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে জানান শিশুর বাবা।
আপাতত হায়দরাবাদেই রয়েছেন তাঁরা। শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার মাথায়, হাঁটুতে আঘাত লেগেছে। ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না সে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বাবা। জানা গিয়েছে, এ ভাবে অত্যাচার করে, সেই সব ভিডিয়ো নিজেদের মোবাইলে আদান-প্রদান করতেন ওই দুই যুবক। সে ভাবেই ভিডিয়োটি পূর্ণ বাবুর হাতে চলে আসে।
এই ঘটনায় বিকৃত মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন সমাজকর্মীরা। শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার এই প্রসঙ্গে বলেন, যাঁদের রক্ষা করার কথা তাঁরাই অত্যাচারী হয়ে উঠছেন। মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে অত্যাচার করার নজির গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই ছেয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আর এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে বলে মনে করেন মীরাতুন নাহার।