AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Malda: যে কোনও দিন গিলে ফেলবে গঙ্গা, তার থেকে এই ভাল… চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন বৃদ্ধা

Malda: বেবির প্রতিবেশী পুষ্প মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁরা চলে যেতেই বৃদ্ধা আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, বৃদ্ধার বাড়ি থেকে গঙ্গা এখন মাত্র ১০ মিটার দূরে। ভাঙনের আতঙ্কেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

Malda: যে কোনও দিন গিলে ফেলবে গঙ্গা, তার থেকে এই ভাল... চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন বৃদ্ধা
সেই বৃদ্ধার বাড়িImage Credit: TV9 Bangla
| Edited By: | Updated on: Jun 30, 2025 | 1:30 PM
Share

মালদহ: দুয়ারে ফুঁসছে গঙ্গা। ভাঙনের আতঙ্ক আর চরম দারিদ্র্যে কতদিন কাটানো যায়! দিনের পর দিন অনাহারে, অর্ধাহারে কাটাতে হচ্ছিল। সোমবার বৃদ্ধা আত্মঘাতী হওয়ায় ফের প্রশ্ন উঠল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গঙ্গার ভাঙন রোধ করা নিয়ে টাকার খেলা চলছে। আর প্রতি বছর জমি বাড়ি গ্রাস করছে গঙ্গা, আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক পরিবার। তাঁরা জানাচ্ছেন, একা অসহায় বৃদ্ধার পাশে ছিলেন না কেউ।

পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা বলছেন এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যও। মালদহের রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্তটোলা গ্রামের ঘটনা। বৃদ্ধার মৃত্যুতে শোরগোল রাজনৈতিক মহলেও। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।

মৃত বৃদ্ধার নাম বেবি মণ্ডল (৬০)৷ রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্তটোলা গ্রামে বসবাস করতেন তিনি। স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। বছর ১২ আগে একমাত্র ছেলেরও মৃত্যু হয়। ছয় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার পাড়ে স্বামী-শ্বশুরের ভিটেয় চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে, খড়ের চালার নীচে একাই দিন কাটাতেন কোনওরকমে। একসময় তাঁদের কিছু জমি থাকলেও, সে সবই গঙ্গায় চলে গিয়েছে।

গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, কোনও কাজ করতে পারতেন না বেবি। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে গ্রামের অদূরে বিহারের দিনারামটোলায়। মাঝেমধ্যে সেই মেয়ে আর জামাই তাঁকে রান্না করা এবং শুকনো খাবার দিয়ে যেতেন। সে সব খেয়েই দিন কাটত তাঁর। অনেকদিন হল তাঁরাও নিয়মিত আসতেন না। ফলে একরকম অনাহারেই দিন কাটত বৃদ্ধার।

এদিকে, ভাঙনের ধাক্কায় সরতে সরতে গঙ্গা এখন বৃদ্ধার ভিটে থেকে মাত্র ৩০ ফুট দূরে। যে কোনও সময় তাঁর মাথা গোঁজায় আশ্রয়টাও নদীতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি। সে কথা তিনি অনেককেই বলেছেন। পঞ্চায়েত সদস্যকেও জানিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। পরিস্থিতি বুঝে সময় থাকতে তাঁর বাড়ির পাশে থাকা সবাই ঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অনেকে এখনও ঘর ভাঙছেন। এতে আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছিল বৃদ্ধার।

শনিবার সকালে মহানন্দটোলা ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা ঘর থেকে বেবির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন। রতুয়া থানার পুলিশ তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করিয়েছে। পুলিশের দাবি অস্বাভাবিক মৃত্যু। আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

বেবির প্রতিবেশী পুষ্প মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁরা চলে যেতেই বৃদ্ধা আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, বৃদ্ধার বাড়ি থেকে গঙ্গা এখন মাত্র ১০ মিটার দূরে। ভাঙনের আতঙ্কেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কিরণকুমার মণ্ডল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এবার নদী বাঁধার কাজ হবে কি না জানতে চাইছিলেন। বলছিলেন, তাঁর ঘরের কিনারায় নদী চলে এসেছে। যে কোনও সময় সেই ঘর গঙ্গায় তলিয়ে যাবে। তাঁকে বলেছিলাম, কান্তটোলায় কাজ শুরু হয়েছে, এখানেও হবে। কিন্তু আমার কথায় তিনি খুব একটা ভরসা পাননি।’

এমনকী ওই পঞ্চায়েত সদস্যের আরও দাবি, বেবি মণ্ডল কেন এলাকার অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই বার্ধক্য ভাতা সহ সরকারি অনেক ভাতাই পায় না। দুয়ারে সরকারে গিয়ে বারবার আবেদন জানিয়েও লাভ হয় না। এলাকায় ভাঙন রোধের নামে দুর্নীতি চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।