মালদা: ফের মৃত্যু। অজানা জ্বর (Unknown Fever) কেড়ে নিল আরও এক নবজাতকের প্রাণ। মাত্র পাঁচ মাস বয়সেই মৃত্যু হল কালিয়াচকের নাজিমা খাতুন নামে এক শিশুকন্যার। শুক্রবার তীব্র শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয় নাজিমা। শনিবার সকালেই চলে গেল একরত্তির প্রাণ। কেন এই মৃ্ত্যু, কারণ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। মুখে কুলুপ এঁটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানানো হয়েছে প্রথম থেকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তারপরেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির।
যদিও মৃতা নাজিমার পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে বেডের অভাব। বেড না পেয়ে একই বিছানায় অন্য আক্রান্তদের সঙ্গে রেখেই চিকিত্সা করাতে হয়েছিল ওই শিশুকন্যাকে। চিকিত্সকদের গাফিলতির জন্যই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির এমনই অভিযোগ। সূত্রের খবর, মেডিক্য়াল কলেজে শনিবার পর্যন্ত ১৬৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বেডের সংখ্যা ১২০। হাসপাতালে শয্যা-সংখ্যা বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্য়েই চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। শনিবারের পর তিনদিনে মেডিক্যাল কলেজে অজানা জ্বরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬। যদিও, হাসপাতালের এমএসভিপি পুরঞ্জয় সাহা জানিয়েছেন, কী কারণে ওই শিশুর মৃত্যু হল তা স্পষ্ট নয়। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজ্য জুড়ে একের পর এক শয্যা সঙ্কটের ছবি সামনে এসেছে। মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি-সহ একাধিক এলাকার হাসপাতালে দেখা গিয়েছে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেড নেই। কখনও হাসপাতালের মেঝেতে, কখনও বাথরুমের সামনে, কখনও করিডরে শুয়ে রয়েছে শিশুরা। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে এত নিশ্চিন্ত প্রশাসন উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যে শিশুদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে চিঠি লিখেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
রাজ্য জুড়ে অজানা জ্বরের এই দাপটকে ‘মরসুমি জ্বর’ বলেই ব্যাখ্যা করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Unknown Fever: বড়দের থেকেই RSV ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, দাবি জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের