আজও চর্চায় রবীন্দ্রনাথ, সোনার বাংলায় হাত দিলে ‘বুঝে নেওয়ার’ হুঁশিয়ারি মমতার

ঋদ্ধীশ দত্ত |

Dec 29, 2020 | 4:29 PM

"রবি ঠাকুর যখন লিখেছিলেন তখনই বাংলা সোনার বাংলা হয়েছে, নতুন করে সোনার বাংলা করার দরকার নেই। বলছে জনগণমন বদলাবে। কত সাহস! বলি একবার হাত তো দিন, বুঝবো।"

আজও চর্চায় রবীন্দ্রনাথ, সোনার বাংলায় হাত দিলে বুঝে নেওয়ার হুঁশিয়ারি মমতার
আজও চর্চায় রবীন্দ্রনাথ, সোনার বাংলায় হাত দিলে 'বুঝে নেওয়ার' হুঁশিয়ারি মমতার

Follow Us

বোলপুর: প্রথমে জনপ্লাবনের মধ্যে দীর্ঘ পদযাত্রা, এরপর সভামঞ্চ থেকে জ্বালাময়ী বক্তৃতা। রবি-তীর্থ বোলপুরের জনতা এদিন দেখা পেলেন ‘ভিন্টেজ’ মমতাকে (Mamata Banerjee)। বিধানসভা ভোটের আগে বাঙালি আবেগ ও গুরুদেব প্রীতি তাঁর কতটা ‘সচ্চা’, সেটা মিছিল শুরুর সময় থেকে সভা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত বুঝিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অমিত শাহ গাড়িতে চেপে রোড শো করলেও মুখ্যমন্ত্রীর পা ছিল মাটিতেই। আর বক্তব্যের শুরুতেই বিজেপির ‘ফেক রাজনীতি’ ও বিশ্বভারতীতে কেন্দ্রীয় শাসকদলের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে, তার সমালোচনা করেন তিনি। নিশানায় নেন উপাচার্যকেও। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতুন লুক নিয়েও একবার খোঁচা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দাঁড়িয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ

তৃণমূল সু্প্রিমো মিছিলে হাঁটার আগে থেকেই গোটা বোলপুর ছয়লাপ হয়ে ছিল রবি ঠাকুরের পোস্টার, তাঁর লেখা কবিতা দিয়ে। মমতার পদযাত্রার ট্যাবলো থেকেও ভেসে আসছিল একের পর এক রবীন্দ্র সঙ্গীত। হাঁটার সময় একবার রবি ঠাকুরের ছবিও হাতে তুলে নেন তিনি। মঞ্চে ওঠার আগে মাল্যদানও করেন মূর্তিতে। বলেন, “রবি ঠাকুর যখন লিখেছিলেন তখনই বাংলা সোনার বাংলা হয়েছে, নতুন করে সোনার বাংলা করার দরকার নেই। বলছে জনগণমন বদলাবে। কত সাহস! বলি একবার হাত তো দিন, বুঝবো।”

নিশানায় বিজেপি

প্রত্যাশিতভাবেই এদিন নেত্রীর আক্রমণের অভিমুখ ছিল বিজেপির দিকে। সপ্তাহখানেক আগে শাহি রোড শো-এর পাল্টা দিতে উঠে এদিন মমতা বলেন, “ঘৃণ্য রাজনীতি আমদানি করা হয়েছে বাংলায়। প্রতি সপ্তাহে আসছে, দরবার খাচ্ছে, ফাইভ স্টারের খাবার। ফেক রাজনীতি। সব ফেক।” মমতার অভিযোগ, “ওরা রবি ঠাকুরকে, শান্তিনিকেতকে, আশ্রমকে, অমর্ত্য সেনকেও ছাড়ে না। কুৎসিত কথায় আক্রমণ চলছে।” বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার উদ্দেশে তিনি বলেন, “রবি ঠাকুর জন্মেছিলেন জোড়াসাঁকোয়। ৬০ বছর বাদে তৈরি করেন বিশ্বভারতী। আজ বিজেপি এসে তাঁর পুরো জন্মস্থানটাই বদলে দিল।”

বিশ্বভারতীতে গৈরিকীকরণের অভিযোগ

বোলপুরের মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার কোনও রাখঢাক না রেখেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ‘বিজেপির লোক’ বলে ইঙ্গিত করেন মমতা। তিনি বলেন, “বিজেপির মার্কামারা স্ট্যাম্প মারা উপাচার্যকে নিয়ে এসেছে। কই আমি তো এমন করি না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে , যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কোথাও এমন দেখতে পাবেন! কেন্দ্র কি আর কোনও উপাচার্য খুঁজে পায়নি, একটা নিয়ে এসেছে বিজেপি মার্কা মারা।”

প্রধানমন্ত্রীর নতুন অবতার নিয়ে খোঁচা

লকডাউনের পর থেকেই নতুন অবতারে ধরা দিতে শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাদা চুল ও দাড়ি, দুই-ই বাড়িয়েছেন। যেন হুবহু রবিঠাকুরের আরেক রূপ। নিন্দুকেরা বলছেন, বাংলা ভোটের কথা মাথায় রেখেই আগে থেকে নতুন সাজে সেজে উঠেছেন নমো। তাঁর সেই রূপ নিয়ে এদিন কটাক্ষ করেন মমতাও। বলেন, “একেবারে যেন রবীন্দ্রনাথ এসে গেছে। সান্তাক্লজ এসে গেছে। এমন হাবভাব।”

আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্র কি আর উপাচার্য পায়নি, একটা নিয়ে এসেছে বিজেপি মার্কা মারা’

দলত্যাগীদের নাম না করে বার্তা

তৃণমূলত্যাগী কারোর নাম না করেই এদিন পরোক্ষে বার্তা দেন মমতা। বলেন, “টাকা দিয়ে কিছু বিধায়ক কেনা যায়। ভোট এলে বাংলায় এদের দেখা যায়। টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টাকা দিয়ে কয়েকটা বিধায়ক কিনে নিয়ে ভাবছে অনেক করেছে। তাও কয়েকটা পচা-ধচা। তৃণমূল কংগ্রেসকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।”

প্রসঙ্গ এনআরসি

এদিন ফের একবার এনআরসি ইস্যু তুলে আনেন মমতা। মোদী নিজেকে দেশের ‘চৌকিদার’ বললেও মমতা এদিন ফের নিজেকে রাজ্যের ‘পাহারাদার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। “এনআরসির তালিকায় নাম তুলে নেবেন না আবার। ভোটার লিস্টে নাম তুলুন। আমি আপনাদের পাহারাদার। বহিরাগত এলে বাড়ির বাচ্চাদের সামলে রাখবেন, নিজেদের সামলে রাখবেন। আর বলবেন, বাড়ির ছেলেরা এলে কথা বলবেন”, বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে আসার পথে শুভেন্দু-অনুগামীদের বাসে হামলা, ‘নিখোঁজ’ বেশ কয়েকজন মহিলা

Next Article