
তপন: লেহঙ্গা সেলাইয়ের জন্য মা ২০ টাকা দেননি। মা টাকা না দেওয়ায় তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কিও হয়। অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী (Suicide) হল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এমনই দাবি নাবালিকার পরিবারের। ঘর থেকেই নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলার তপন থানার মনোহলিতে৷ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শিখা রায়(১২)। তপন থানার আজমতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহলি গ্রামের বাসিন্দা শিখা। রবিবার সন্ধ্যায় তাদের ঘর থেকে নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। সোমবার সকালে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে তপন থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মনোহলি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল শিখা রায়। তার বাবা বিপুল রায় পেশায় শ্রমিক। মা শ্রমিকের কাজ করেন৷ সংসারে অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী৷ এর মধ্যেই রবিবার বান্ধবীদের সঙ্গে সেলাইয়ের দোকানে যাওয়ার কথা ছিল শিখার। বান্ধবীদের জামা সেলাইয়ের পাশাপাশি শিখার লেহঙ্গার হাতা সেলাই করার কথা ছিল। সেলাইয়ের দোকানে যাওয়ার জন্য রবিবার শিখার বান্ধবীরা তার বাড়ির সামনে গিয়ে অপেক্ষা করছিল। তখন লেহঙ্গা সেলাইয়ের জন্য শিখা মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা চায়। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় তা দিতে পারেননি মা। এটা নিয়ে মায়ের সঙ্গে শিখার একপ্রস্থ বচসাও হয়। মা বকাবকি করে মাঠে চলে যান। এতেই অভিমানে শিখা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বলে তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগেই ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস লাগায় শিখা৷
এরপর সন্ধ্যায় শিখার বাবা-মা বাড়িতে ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা বন্ধ। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও মেয়ে দরজা না খোলায়, ডাকাডাকি করে সাড়া না পাওয়ায় দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন শিখার মা-বাবা। তারপরই তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! তাঁরা দেখেন, ঘরে সিলিং থেকে ঝুলছে মেয়ের দেহ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর এদিন সকালে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
শিখার এভাবে মৃত্যুর ঘটনায় শোকে বিহ্বল তার বাবা, মা সহ এলাকাবাসী। শিখার বাবা বিপুল রায় বলেন, “মেয়ে লেহঙ্গা সেলাইয়ের জন্য ২০ টাকা চেয়েছিল মায়ের কাছে। সেই টাকা না দিতে পারায় মেয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে৷ টাকা না দেওয়ার জন্য মেয়ে এমন করবে ভাবতেই পারছি না। মেয়ের আগে কোনদিন অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। কাল কী হল কিছুই বুঝতে পারছি না।” গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তপন থানার পুলিশ।