মুর্শিদাবাদ: দলীয় সভা হোক কিংবা মন্ত্রিসভার বৈঠক, ভোটমুখী বাংলায় শাসক দলের কোনও নেতা অনুপস্থিত মানেই জোরদার হয় তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা। এই প্রেক্ষিতে নতুন করে জল্পনা শুরু হল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডলকে নিয়ে। কারণ, সোমবার মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জেলার সবক’টি আসন জেতার অঙ্গীকার করছেন সভায়, তখন তাঁর আশেপাশে দেখা মিলল না জেলা পরিষদের সভাধিপতির। তাহলে কি এবার শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মোশারফও বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন? সোমবার দুপুরের পর এমনই জল্পনা ভাসছে মুর্শিদাবাদের বাতাসে।
দুয়ারে বিধানসভা ভোট। বাংলা জয়ে মরিয়া হয়েছে গেরুয়া শিবির। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে আলাদাভাবে চাপে রাখছে মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের গোষ্ঠীকোন্দল। এ নিয়ে বারবার নেতাদের সতর্ক করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। গত মাসেই মুর্শিদাবাদ নেতৃত্বকে নিয়ে একান্ত বৈঠক করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো স্বয়ং। বার্তা দিয়েছেন, একুশের ভোটে একজোট হয়ে লড়তে হবে সবাইকে। মোশারফকেও আলাদা করে সুব্রত বক্সির সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরেই কি জট কাটেনি? মমতার জনসভায় মোশারফের না থাকা ফের সেই প্রশ্নই তুলে দিল।
আরও পড়ুন: সব নিয়ে যাবে আদানিবাবুরা, আলু-সেদ্ধ ভাতও পাবে না কৃষকরা : মমতা
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের গোষ্ঠীবিবাদ এতটাই চরম আকার ধারণ করেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা ও ব্লক কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। গত অগস্ট মাসে বিজেপি ঘুরে ফের তৃণমূলে এসেছেন হুমায়ূন কবির। তাঁকে নিয়ে দলের একাংশের আপত্তি ছিলই। একইভাবে ক্ষোভ রয়েছে জেলা জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফকে নিয়েও।
এদিকে তৃণমূল-বিজেপি দুই শিবিরেই ভোটের আগে শিবির বদল অব্যাহত রয়েছে। প্রায় রোজদিন তৃণমূল থেকে বিজেপি এবং বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করছেন নেতারা। এই প্রেক্ষিতে জল্পনা শুরু হল মোশারফ মণ্ডল ওরফে মধুকে নিয়ে।
তখনও শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেননি। তবে অরাজনৈতিক সভা করছেন জমিয়ে। সে সময় জেলা পরিষদের প্রয়াত কর্মাধ্যক্ষ মফেজুদ্দিন মণ্ডলের স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে দলের সঙ্গে বিরোধে জড়ান মধু। কারণ, সেই সভায় তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। এরপর রাতারাতি মোশারফের নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করা হয়। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সুব্রত বক্সির কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে অবশ্য সাময়িক কাজ হয়। ‘দাদার অনুগামী’ থেকে ‘দিদির অনুগামী’ হন মোশারফ। গত জানুয়ারিতে তৃণমূল নেত্রীর ডাকে বৈঠকেও হাজির হন। কিন্তু মঙ্গলবার নেত্রীর সভায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হল রাজনৈতিক মহলে।