মুর্শিদাবাদ: সম্প্রতি, মন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় প্রকট হয় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছেন বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শাসক শিবিরকে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূলের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মূষলপর্ব’ বলে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস নেতা ( Adhir Chaudhuri)।
সাংবাদিক বৈঠকে অধীর বলেন, “তৃণমূলে এখন মূষলপর্ব শুরু হয়েছে। এত টাকা, এত পদ, এত ক্ষমতা! কে কী করবে কিছু বুঝতে পারছে না। কোনও নির্বাচন নেই, পঞ্চায়েত নেই। তৃণমূল একটা সার্কাস পার্টি। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। এত টাকা, এত পদ, এসব হলে তো বিস্ফোরণ হবেই। খালি লুঠ আর লুঠ। লুঠ করে এত এত খাবে তো কি নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করবে না তো কোলাকুলি করবে!”
এখানেই না থেমে কংগ্রেস নেতার আরও সংযোজন, “তৃণমূল দল-উপদলে বিভক্ত। একটা অদ্ভূত রাজনৈতিক দল তৃণমূল। সকলের খালি গাড়ি-বাড়ি দরকার। সেইজন্য দল করে। এর ফলাফল আর কত ভাল হবে। একটা রাজনৈতিক দলের সংস্কৃতিই যদি হয় কেবল লুঠ আর লুঠ তাহলে আর এর থেকে ভাল কী করে হবে! লুঠ করে খাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে তৃণমূল। খাওয়ার প্রতিযোগিতায় একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলকে উত্খাত না করলে এমন চলতেই থাকবে।”
গত ২১ নভেম্বর একটি চারচাকা গড়িতে করে কলকাতা (Kolkata) থেকে মুর্শিদাবাদ ফিরছিলেন একই পরিবারের ১১ জন সদস্য। র্ধমান কাটোয়া রোডের কামনাড়া এলাকায় তাদের গাড়ি একটি ডাম্পারে ধাক্কা মারে। এরপরই শেষ হয়ে যায় সবকিছু। ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পৌঁছায় স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি নির্দেশ বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহাকে নির্দেশ দেন যাতে ওই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁরা। ঠিক সেই কথামতোই হল কাজ। ওইদিনই এলাকায় পৌঁছন জীবন কৃষ্ণবাবু। সেই মুহূর্তে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেন তিনি।
এতদূর পর্যন্ত প্রায় সব ঠিকঠাক চলছিল। সমস্যার সূত্রপাত হয় বুধবার। বিকেল নাগাদ ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান উদ্যান পালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা ও বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। অভিযোগ, সেই সময় অতর্কিতে তাঁদের উপর হামলা চালায় যুব তৃণমূল সভাপতি মায়ের আলম ও ব্লক সভাপতি গোলাম মুর্শেদ ও তাঁর দলবল। গাড়ি ভাঙচুর করা হয় মন্ত্রী ও বিধায়কের। সঙ্গে মারধর করারও অভিযোগ উঠছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ওঠে ওই পরিবারের সঙ্গে কেন দেখা করার জন্য কেন জীবন কৃষ্ণবাবু একা গেলেন মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে? কেন আমন্ত্রণ জানানো হল না জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি ও ব্লক সভাপতিকে?
এই বিষয়ে বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা বলেন, “আজকে রাজ্যের মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাই আমাকে তিনি ডেকে নিয়েছিলেন। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে বেশি মানুষের জমায়েত করা ঠিক হবে না। আমরা ওই বাড়িতে যাব আর দেখা করেই চলে আসব। কিন্তু ব্লক সভাপতি ও যুব সভাপতি দলবল নিয়ে আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়। পরে পুলিশের সাহায্যে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করি। পাশাপাশি ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি সমবেদনা জানাই। বেরিয়ে আসার সময় হঠাৎ ব্লক সভাপতি ও যুব সভাপতির লোকজন মারধর করতে শুরু করে আমাকে ও মন্ত্রীকে। ওরা বলে থাকে এমএলকে মার, মন্ত্রীকে মার। আমাদের দুজনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।”
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ব্লক সভাপতি গোলাম মুর্শেদের বক্তব্য, “মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের ছেলেরা করেনি। আমাদের মন্ত্রী আমাদের বিধায়ক কেন হামলা করব? অন্ধকার রাস্তা ছিল কে করেছে জানিনা।” মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “আজ আমি শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেম। সেই সময় আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তবে কে বা কারা করেছে সেই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” এরপরেই, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ জানান বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা।
আরও পড়ুন: TMC: ‘গোঁজ প্রার্থী দিলে চামড়া গুটিয়ে নেব’, হুঁশিয়ারি বনগাঁর তৃণমূল সভানেত্রীর