মুর্শিদাবাদ: মালদা-মুর্শিদাবাদ জেলায় নতুন কোনও ঘটনা নয় গঙ্গা ভাঙন। দুর্যোগ এলেই ফুঁসতে থাকে গঙ্গা। ভাঙতে থাকে নদীপারের জমি। ধসে যায় একের পর এক বাড়ি-ঘর। এমনকী, গঙ্গায় জল বাড়লেও একই সমস্যা। বঙ্গ শিয়রে পরপর কয়েকটি দুর্যোগে জীবন-মরণ বিপদই দেখেছে এলাকাবাসী। এ বার, প্রশাসনিক বৈঠকে গঙ্গা পারের ভাঙন নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেন, “গঙ্গার ভাঙন আটকাতে কেন্দ্র এক পয়সা দেয় না। যতটুকু কাজ হয়েছে আমরাই করেছি।” তারপর একটু থেমে বলেন, ”গঙ্গার ধারে বাড়ি করা বন্ধ করুন। ওভাবে বাড়ির পর বাড়ি করলে তো জমি ধসবেই। আজ না হোক কাল ভেঙে পড়ে যাবে। ডিএম, বিডিও-দের বলব, যে যে এলাকায় ভাঙন বেশি, সেই এলাকাগুলোতে ব্ল্যাক স্পট করে সেখান থেকে মানুষকে সরিয়ে দাও। তাদের নতুন জায়গা করে দাও।…বাংলায় জমির অভাব নেই। এভাবে হলে যেকোনওদিন বড় বিপদ হবে।”
বস্তুত, গঙ্গায় ভাঙন নতুন কিছু নয়। নদী ভাঙনকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)-কে চিঠি দিয়েছিলেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। কেন্দ্রের কাছে নদীর পাড় বরাবর ভূমিক্ষয় রোধে তহবিল বরাদ্দ করার আর্জি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা।
মালদহ জেলার কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর মানিকচকে ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদেও বিস্তীর্ণ অংশে গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা গঙ্গা ভাঙনের ফলে বিপর্যস্ত।
চাচণ্ড গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গঙ্গার তীরে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বন্যাপ্রতিরোধক মাটির তৈরি বাঁধে গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের কিছু অংশ তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে। আর এতেই বিপদ দেখছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, ওই ফাটল ক্রমে বাড়তে থাকলে ভাঙনের গ্রাসে বাড়িঘর হারাতে হতে পারে এলাকাবাসীর।
নদীবাঁধে ওই ফাটলের জেরে ইতিমধ্যেই গঙ্গা তীরবর্তী দুটি স্কুল জলে ডোবা কেবল সময়ের অপেক্ষা। ভাঙনের জেরে ফাটল বৃদ্ধি হলেই আর দুই একদিনের মধ্য়েই আস্ত দুটো স্কুল চলে যাবে জলের তলায়। শুধু তাই নয়, শেষ কয়েকদিনে গ্রামের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে গঙ্গা। এরকম চলতে থাকলে ডুবে যেতে পারে গোটা গ্রাম। যদিও, নদীবাঁধে ফাটলের জেরে বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ফাটলে বালির বস্তা পুরে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ করা হোক। সম্প্রতি, সামশেরগঞ্জের ধানঘড়া গ্রামে প্রায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মিটার এলাকা গঙ্গা ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ডুবে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। বেশ কিছু এলাকার জমি গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যায়।
এর আগে সামশেরগঞ্জে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। ৫০০-র বেশি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছিলেন প্রায় ৭০ মতো পরিবার। কিছুদিন আগে সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গোপালপুরের ভাঙন পরিস্থিতি দেখে যান। কিন্তু গৃহহারাদের পুনর্বাসন বা ত্রাণের কোনও ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। বারবার বলা সত্ত্বেও ভাঙন রোধে কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন, অভিযোগ এমনটাই। সেই পরিস্থিতিতে এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর কী পদক্ষেপ করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষে সেদিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল।