
মুর্শিদাবাদ: হিংসা থেমেছে। কিন্তু ভয়? সে তো এখনও যায়নি মুর্শিদাবাদের দুর্গতদের ‘মন’ থেকে। গত সপ্তাহে সামশেরগঞ্জে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল অশান্তির ঘটনা। সেই আবহে নিজেদের ‘প্রাণ বাঁচাতে’ রাতারাতি ঘর ছেড়েছিলেন ৫০০-এর অধিক পরিবার। নদী পেরিয়ে তারা চলে গিয়েছিলেন পাশের জেলা মালদায়। সেখানে পারলালপুর স্কুলে তৈরি হয়েছে একটি অস্থায়ী ত্রাণ শিবির। আপাতত ওখানেই ঠাঁই হয়েছে এই দুর্গতদের।
কিন্তু ঘরে তো ফিরতেই হবে। রবিবার ঘটল তেমনই কাণ্ড। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। জানা গিয়েছে, এদিন ৮টি ঘরছাড়া পরিবারকে আবার মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনে পুলিশ-প্রশাসন। তাদেরকে জানানো হয়, যে ভেঙে পড়া ঘর প্রশাসন তরফে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কিছু সামান্য কাজ চলছে। আপাতত সেখানটা থাকার মতো।
সাধারণভাবেই, পুলিশের কথা শুনে নতুন করে ‘বিশ্বাস’ ফিরে পান দুর্গতরা। ফিরে আসেন নিজের জেলায়। কিন্তু ছেড়ে যাওয়া গ্রামে ফের ‘পা’ রাখতেই মাথায় হাত তাদের। আবার মনে চেপে বসে ‘নতুন ভয়’। এই ভয় কিন্তু হিংসায় জড়িয়ে পড়ার নয়, এই ভয় আসলে টিকে থাকার। কী খাব, কোথায় থাকব তার ভয়। ঘরছাড়াদের অভিযোগ, পুলিশ ভুল বুঝিয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে, কোনও কাজই হয়নি। এক ঘরছাড়া মহিলার দাবি, ‘বারবার বলেছিলাম আমার গাড়ি-বাড়ি সব লুট হয়ে গিয়েছে। কিছু বেঁচে নেই। তারপরেও আমাদের নিয়ে এল। এখন কী করে থাকব এই বাড়িটাতে?’ আরও এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘পুলিশ আমাদের ওখানে থাকতে দিচ্ছে না। খালি বলছে, বাড়ি যাও, বাড়ি যাও। কোথায় থাকব, কী রান্না করে খাব, কিছুই জানি না। আমাদের তো ঘর আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল, এখন আমাদেরকে বিষ দিয়ে মেরে দিক। আমাদের বেঁচে থাকাটা কি অন্যায়?’
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ ঘিরে উত্তেজনা যেন নামছে না। রবিবার হিংসা কবলিত সামশেরগঞ্জের বেতবোনায় দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। কিন্তু গ্রামে পা দিতেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় নেতাকে। কেন গত আট দিন তার পাত্তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তখনই গ্রাম ছাড়া হন বিধায়ক।