মুর্শিদাবাদ : কিছুদিন আগেও তাঁর সব ধ্যানজ্ঞান ছিল পারিবারিক ব্যবসাই। রয়েছে একাধিক বিড়ি কারখানা, রয়েছে নার্সিংহোম। কিন্তু, কোনওদিন যে রাজনীতি করবেন এ কথা আগে কখনওই ভাবেননি। বাবা কংগ্রেস (Congress) মনোভাবাপন্ন। প্রায়শই মানুষের আপদে-বিপদে ছুটে যেতে দেখেছেন। নিজেও নানা প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। নানা ক্ষেত্রে দিয়েছেন অনুদান। কিন্তু, অচিরেই বুঝেছিলেন ছোট ছোট সাহায্য নয়, মানুষের জীবনমান বদলাতে যোগ দিতে হবে রাজনীতিতে। সহজ কথায়, বাবাকে দেখেই রাজনীতি আসার ঝোঁক তৈরি হয়েছিল তাঁর। সেই ভাবনা থেকেই শেষে যোগ কংগ্রেসে। আর কংগ্রেসে যোগ দিয়েই হয়ে গেলেন নির্বাচনী পদপ্রার্থী। শুধু দাঁড়ালেন না, বড় জয় ছিনিয়ে নিয়ে ঘরে ফিরলেন সারদিঘির ঘরের ছেলে বাইরন বিশ্বাস (Bayron Biswas)।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘি (Sagardighi Bye Election) থেকে জিতেছিলেন সুব্রত সাহা। তৃণমূলের এই প্রার্থী সেখান থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর ফাঁকা আসনেই এবার হল উপনির্বাচন। এই নির্বাচনেই সকলকে চমকে একেবারে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। প্রায় ২৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। পড়াশোনা বেশি দূর করেননি। কাঞ্চনতলা জেডি ইন্সস্টটিউশন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তারপরই বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। খাতায় কলমে শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাশ। কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন বাবর আলী বিশ্বাসের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বাড়ির বড় ছেলে বাইরন।
এলাকায় বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিল্পপতি হিসাবে পরিচিতি রয়েছে বাবা বাবর আলীর। বাবার হাত ধরে পারিবারিক ব্যবসায় ঢোকার পর এলাকায় পরিচিতি বাড়তে থাকে বায়রনের। বাড়ি সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানে। তাঁদের আরও একটি বাড়ি রয়েছে রঘুনাথগঞ্জেও। ব্যবসায়িক হওয়ার সুবাদে এলাকার অনেক নেতাদের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও এই প্রথমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। ব্যবসায়িক কারণেই এলাকার বাম, তৃণমূল, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁদের পরিবারের। নানা ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই রাজনৈতিক যোগের প্রয়োজন পড়ে। সে কারণেই এলাকার বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গেই তাঁদের পরিবারের বেশ ভালই সম্পর্ক বলে জানা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, সাগরদিঘি বিধানসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮২৫। গত সোমবার ভোটগ্রহণ হয় সাগরদিঘিতে। এই উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৫.১৮ শতাংশ। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কেন্দ্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে সংখ্যালঘু ভোটাররা। সেখানে বায়রনের এই জয় পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাম, কংগ্রেস সমর্থকদের মনোবল অনেকটাই বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।