মুর্শিদাবাদ : গতকাল মন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় প্রকট হয় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। এবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানালেন বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। গতকাল গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হলেন উদ্যান পালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা ও বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। এরপর আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন বিধায়ক।
চিঠিতে ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোলাম মুর্শেদ ও যুব তৃণমূল সভাপতি মাহে আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এ দিকে, গতকাল মন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় বড়ঞা ব্লকের বিপ্রশেখর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি রাজু মির্জা সহ মোট ১৬ জনকে গ্ৰেফতার করেছে বড়ঞা থানার পুলিশ।
৩০৭, ৩৪১, ৩২৩ ও ৪২৭ ধারায় মামলা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আজ ধৃতদের কান্দি মহুকুমা আদালতে তোলা হবে।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ব্লক সভাপতি গোলাম মুর্শেদের বক্তব্য, মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের ছেলেরা করেনি। আমাদের মন্ত্রী আমাদের বিধায়ক কেন হামলা করব? অন্ধকার রাস্তা ছিল কে করেছে জানিনা।
কিছুদিন আগেই এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় একই পরিবারের পাঁচজনের। সেই পরিবাারের সঙ্গে দেখা করতেই যাচ্ছিলেন মন্ত্রী সুব্রত সাহা। সেই সময় এই ঘটনা ঘটে। মন্ত্রী সুব্রত সাহা জানান, আমি শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তবে কে বা কারা করেছে সেই বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
গত ২১ নভেম্বর একটি চারচাকা গড়িতে করে কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ ফিরছিলেন একই পরিবারের ১১ জন সদস্য। বর্ধমান কাটোয়া রোডের কামনাড়া এলাকায় তাদের গাড়ি একটি ডাম্পারে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পৌঁছায় স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি নির্দেশ বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহাকে নির্দেশ দেন যাতে ওই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁরা। ঠিক সেই কথামতোই হয় কাজ। ওইদিনই এলাকায় পৌঁছায় জীবন কৃষ্ণবাবু। সেই মুহুর্তে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেন তিনি।
কিন্তু বিধবার বিকেল নাগাদ ওই পরিবারের সঙ্গে মন্ত্রী সুব্রত সাহা ও বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা দেখা করতে যাওয়ার সময় হামলা হয়। অভিযোগ, সেই সময় অতর্কিতে তাঁদের উপর হামলা চালায় যুব তৃণমূল সভাপতি মায়ের আলম ও ব্লক সভাপতি গোলাম মুর্শেদ ও তার দলবল। গাড়ি ভাঙচুর করা হয় মন্ত্রী ও বিধায়কের। সঙ্গে মারধর করারও অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠছে ওই পরিবারের সঙ্গে কেন দেখা করার জন্য কেন জীবন কৃষ্ণবাবু একা গেলেন মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে? কেন আমন্ত্রণ জানানো হল না জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি ও ব্লক সভাপতিকে? এই নিয়েই দ্বন্দ্ব।
এই বিষয়ে বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা বলেন, “রাজ্য়ের মন্ত্রী সুব্ত সাহা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাই আমাকে তিনি ডেকে নিয়েছিলেন। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে বেশি মানুষের জমায়েত করা ঠিক হবে না। আমরা ওই বাড়িতে যাব আর দেখা করেই চলে আসব। কিন্তু ব্লক সভাপতি ও যুব সভাপতি দলবল নিয়ে আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়। পরে পুলিশের সাহায্যে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করি। পাশাপাশি ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি সমবেদনা জানাই। বেরিয়ে আসার সময় হঠাৎ ব্লক সভাপতি ও যুব সভাপতির লোকজন মারধর করতে শুরু করে আমাকে ও মন্ত্রীকে। ওরা বলে থাকে এমএলকে মার, মন্ত্রীকে মার। আমাদের দুজনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।”
আরও পড়ুন: Srabanti Chatterjee: বিজেপি ছাড়ছেন শ্রাবন্তী, টুইটে উগরে দিলেন অসন্তোষ