নদিয়া: হাঁসখালিতে নির্যাতিতার বাড়িতে যায় বিজেপির তথ্য অনুসন্ধান কমিটি। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন তামিলনাড়ুর বিধায়ক ভানাতি শ্রীনিবাসন, মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি খুসবু সুন্দর, উত্তর প্রদেশের সাংসদ রেখা ভর্মা। নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এরপর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যান নির্যাতিতার বাড়ির আধ কিলোমিটার দূরে থাকা শ্মশানটিতে। ওই শ্মশানেই কাউকে না জানিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাহ করে দেওয়া হয়েছিল নির্যাতিতার দেহ। অভিযুক্তের বাড়িতেও যাওয়ার কথা বিজেপি তথ্য অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের। এদিন সকাল থেকেই নির্যাতিতার বাড়ির সামনে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। বেলা বাড়তেই ভিড় জমাতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। নির্যাতিতার পরিবারের কেউ এদিন ঘরের বাইরে বের হননি। হাঁসখালির ঘটনায় রাজ্য সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কী নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তদন্তকারীরা, তা সবই রিপোর্টে বিস্তারিত উল্লেখ করবে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব ও ডিজির কাছ থেকে এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
বিধায়ক জগন্নাথ সরকার বলেন, “রাজ্যে এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তার তো সুরাহা নেই। তাই বিজেপির তরফে একটি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। দলের প্রতিনিধিরা সব খতিয়ে দেখবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জেপি নাড্ডার কাছে রিপোর্ট জমা করবে।”
দলের সভানেত্রী মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি খুসবু সুন্দর বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সঠিক কারণ খুঁজে বার করতে হবে। সব দিকে দেখে রিপোর্ট আমরা জেপি নাড্ডার কাছে জমা দেব।” তিনি আরও বলেছেন, “আমি এ রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে একবার অনুরোধ করব, যদি একটু সময় বার করে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে একবার কথা বলে নিতেন, তাহলে অনেক কিছুই জানতে পারতেন। আমরা তো অন্য রাজ্যের। আমরা সবাই নির্যাতিতার পরিবারের পাশে রয়েছি। এটা মুখ্যমন্ত্রী করতে পারতেন।”
প্রতিনিধি দলে থাকা বাংলার সদস্য বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা চৌধুরী বলেন, “ঘটনার রাতে যখন নির্যাতিতার মা মেয়েটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাঁদের বাড়ি ঘিরে রেখেছিল কয়েকজন। মা জানিয়েছেন, আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। ওকে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বাইরের লোকেরা এসে মেয়েটাকে একটা বাঁশে বেঁধে কাপড়ে মুড়ে শ্মাশানে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও ডাক্তার-চিকিৎসক দেখেননি। কোনও সরকারি আধিকারিক দেখেননি। পুলিশও ছিল না। ”
এই ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার নাম জড়িয়েছে। মূল অভিযোগ তাঁরই ছেলের বিরুদ্ধে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নারী নিরাপত্তা নিয়ে বিধানসভার অলিন্দ থেকে পথ, সর্বত্রই সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। তাতে ঘৃতাহুতি করেছে হাঁসখালি কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রেগন্যান্ট তত্ত্ব’। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘সুইং’ দিয়েছেন তৃণমূলেরই বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়! তাঁর বক্তব্য, ‘মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণও লজ্জার।’ আর তাতেই রীতিমতো হাতে লোপ্পা বল পেয়ে শাসকদলকে আরও ঠেসছে বিরোধী শিবির। বগুটুইয়ের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের রিপোর্টে সরাসরি তৃণমূল নেতার নাম জড়ানোয়, কতটা চাপ বাড়াবে বিজেপি শিবির, সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন: বিছানায় বীর্যের দাগ, মেঝেতে রক্ত! গণধর্ষণে মূল অভিযুক্তের বাড়ি থেকে সিবিআই-এর হাতে একটি ফোনও