নদিয়া: উপনির্বাচন মিটেছে। ফোটোফিনিশ জয় পেয়েছে তৃণমূল (TMC)। কিন্তু, তারপরেও থামানো যাচ্ছে না শাসক শিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিজয়মিছিলকে কেন্দ্র করে রাতভর চলল বোমাবাজি। আতঙ্ক শান্তিপুর থানার হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেব ডাঙ্গা এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। লাঠিচার্জও করে পুলিশ। চলে ধরপাকড়।
জানা গিয়েছে, উপনির্বাচনের জয়লাভ উপলক্ষ্য়ে সাহেবডাঙায় সোমবার একটি বিজয় মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই মিছিলে আচমকা বোমাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ। সাহেবডাঙার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ করে বলেন, “ভোটের আগেই বিজেপি ছেড়ে কয়েকজন এসেছে। তারা দলের কোনও ভাল করবে না। বিজয়মিছিলে তারাই বোমাবাজি করেছে। পাল্টা, পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে যায়।”
অন্যদিকে, অন্য আরেক তৃণমূল নেতার কথায়, “শান্তিপুরে তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আমাদের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী সমস্ত সন্ত্রাস কড়া হাতে দমন করবেন। বিজেপির কিছু দুষ্কৃতী এই কাজ করেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। যে বা যারা এইধরনের কাজ করে দলের বদনাম করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শান্তিপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে গোটা পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। চলে লাঠিচার্জও। ঘটনাস্থল থেকেই বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ রানাঘাট মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে যাতে উত্তেজনা না ছড়ায় তারজন্য এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
উপনির্বাচনের প্রাক্কালে শান্তিপুরে একাধিক বিজেপি কর্মী সমর্থক তৃণমূলে যোগ দেয়। নির্বাচনের দিন শান্তিপুরে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। শান্তিপুরে গণনা পূর্বেই শুরু হয় বিতর্ক। কী করে গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, প্রশ্ন বিজেপির। শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের গণনাকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপির জগন্নাথ সরকার অভিযোগ তোলেন, গণনা শুরুর আগে ভিতরে গিয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি গণনা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বিজেপি সাংসদের অভিযোগ নিয়ে মহুয়া মৈত্রের পাল্টা তোপ, “অশিক্ষিত বক্তব্যের উত্তর দেওয়ার কোনও ইচ্ছা আমার নেই।”
এদিকে, অভিযোগ পেয়ে মহুয়া মৈত্রকে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন। বেআইনি ভাবে তিনি গণনাকেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। রিটার্নিং অফিসার (RO) তাঁকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। সমস্ত বিতর্ক সরিয়ে অবশেষে শান্তিপুরে জয়লাভ হয় তৃণমূলের।
বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিপুর বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। প্রায় ৩০ হাজার বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু ফল প্রকাশের পর তিনি পদত্যাগ করেন। সাংসদ পদ বেছে নিয়েই পদত্যাগ করেন তিনি। শান্তিপুরে তৃণমূলের প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী, বিজেপির প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস, সিপিএমের প্রার্থী সৌমেন মাহাতো। কংগ্রেসও প্রার্থী দেয়। সবমিলিয়ে শান্তিপুর হাতের মুঠোয় আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। অবশেষে রেকর্ড জয় হয় তৃণমূলের।
আরও পড়ুন: Joy Saha: ছটপুজোর সামগ্রী দানে ‘সরকারি সন্ত্রাসের’ শিকার বিজেপি নেতা!