
রানাঘাট: হার মানাবে হিন্দি সিনেমার জমজমাট গল্পকে। রানাঘাটে (Ranaghat) সোনার দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা শোরগোল ফেলেছে গোটা দেশে। মঙ্গলবার দিনেদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালাচ্ছিল একদল ডাকাত। কিন্তু, সাক্ষাৎ যমের মতো তাঁদের ধাওয়া করেছিলেন তিনি। তাই যেন কষা ছক মুহূর্তেই বানচাল হয়ে গিয়েছিল ডাকাতদের। তাঁর ছোঁড়া গুলিতেই ঘায়েল হয়েছে দুই ডাকাত। ধরা পড়েছে আরও কয়েকজন। তিনি রতন রায়। রানাঘাট থানার এএসআই। তাঁর ডাকাত ধরার রোমহর্ষক ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ক্যামেরা বন্দি হয়েছে রানাঘাটের অনেকের ফোনেই। তারপর থেকেই রানাঘাটের সকলের মুখে এখন একটাই নাম রতন কুমার রায়। বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন পুলিশে। কিন্তু, মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে রানাঘাটের মানুষ তাঁরই জয়গান করছেন। কিন্তু, সশস্ত্র ডাকতদের সামনে দাঁড়িয়েও একবার কাঁপল না বুক? কী করে থাকলেন এতটা অকুতভয়?
টিভি-৯ বাংলার এক্সক্লুসিভি সাক্ষাৎকারে রতনবাবু বলছেন, ভয় তাঁর লাগেনি। বরং পুলিশের যেটা নৈতিক কর্তব্য সেটাই তিনি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের প্রতি সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী। কীভাবে পুলিশের কাজ করব সেটা আমি জানি। পুলিশ হিসাবে আমার যেটা নৈতিক কর্তব্য সেটাই আমি কাল করেছি। আইসি স্যার আমাকে যা নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আমি পালন করেছি।”
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে একাধিক ইস্যুতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা। প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু, সেখানে যেন কর্তব্যে বলীয়ান থেকে নৈতিকতার এক অনন্য নজির তৈরি করেছেন রতনবাবু। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে গোটা রানাঘাট। কেমন লাগছে প্রশংসা পেয়ে? রতনবাবু বলছেন, “কালকের কাজের পর অনেক মানুষই প্রশংসা করছেন। ভাল কাজের জন্য প্রশংসা পেলে ভালই তো লাগে। এটাই পাওয়ার। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাছে এটা বড় সাফল্য।”
একইসঙ্গে ডাকত ধরতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রানাঘাটের বাসিন্দাদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “রানাঘাটের সবাইকে আমরা এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ এলাকার মানুষেরা আমাদের খুবই সাহায্য করেছেন। বাড়ি থেকে অনেক ফোন আসে। আমার ছবি দেখার পর তো আমার ছেলে ঘাবড়ে গিয়েছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত আমরা বেঁচেছি। আমার স্ত্রীও এখন খুব খুশি। ফোনও করেছিল।”